কাহিনী

এত স্নেহ। করিতেছি সর্বনাশ তোর,

এত স্নেহ। জ্বালাতেছি কালানল ঘোর

পুরাতন কুরুবংশ-মহারণ্যতলে —

তবু পুত্র, দোষ দিস স্নেহ নাই ব'লে?

মণিলোভে কালসর্প করিলি কামনা,

দিনু তোরে নিজহস্তে ধরি তার ফণা

অন্ধ আমি। — অন্ধ আমি অন্তরে বাহিরে

চিরদিন — তোরে লয়ে প্রলয়তিমিরে

চলিয়াছি — বন্ধুগণ হাহাকাররবে

করিছে নিষেধ, নিশাচর গৃধ্র-সবে

করিতেছে অশুভ চীৎকার, পদে পদে

সংকীর্ণ হতেছে পথ, আসন্ন বিপদে

কণ্টকিত কলেবর, তবু দৃঢ়করে

ভয়ংকর স্নেহে বক্ষে বাঁধি লয়ে তোরে

বায়ুবলে অন্ধবেগে বিনাশের গ্রাসে

ছুটিয়া চলেছি মূঢ় মত্ত অট্টহাসে

উল্কার আলোকে — শুধু তুমি আর আমি,

আর সঙ্গী বজ্রহস্ত দীপ্ত অন্তর্যামী —

নাই সম্মুখের দৃষ্টি, নাই নিবারণ

পশ্চাতের, শুধু নিম্নে ঘোর আকর্ষণ

নিদারুণ নিপাতের। সহসা একদা

চকিতে চেতনা হবে, বিধাতার গদা

মুহূর্তে পড়িবে শিরে, আসিবে সময় —

ততক্ষণ পিতৃস্নেহে কোরো না সংশয়,

আলিঙ্গন করো না শিথিল, ততক্ষণ

দ্রুত হস্তে লুটি লও সর্ব স্বার্থধন —

হও জয়ী, হও সুখী, হও তুমি রাজা

একেশ্বর। — ওরে, তোরা জয়বাদ্য বাজা।

জয়ধ্বজা তোল্‌ শূন্যে। আজি জয়োৎসবে

ন্যায় ধর্ম বন্ধু ভ্রাতা কেহ নাহি রবে —

না রবে বিদুর ভীষ্ম, না রবে সঞ্জয়,

নাহি রবে লোকনিন্দা লোকলজ্জা-ভয়,