বশীকরণ

নিরুপমাকে লইয়া শ্যামার প্রবেশ

আশু। ( স্বগত) আহা, কী সুন্দর! মাতাজির বশীকরণ-বিদ্যা যেন মূর্তিমতী! এঁর মুখে কোনো মন্ত্রই বিফল হতে পারে না।

শ্যামা। যাও, লজ্জা কোরো না মা! উনি যা জিজ্ঞাসা করেন উত্তর দিয়ো।

আশু। লজ্জা করবেন না। মাতাজি আমার প্রতি যেরকম অনুগ্রহ প্রকাশ করেছেন, আপনিও আমাকে আপনার লোকের মতোই দেখবেন। ( আত্মগত) মেয়েটি কী লাজুক! আমার কথা শুনে আরো যেন লাল হয়ে উঠল।

শ্যামা। বাবা, তোমার ইচ্ছামত ওকে জিজ্ঞাসাপত্র করো।

আশু। আপনার কোন্‌ কোন্‌ বিদ্যায় অধিকার আছে, জানতে উৎসুক হয়ে আছি।

শ্যামা। বয়স অল্প, বিদ্যা কতই বা বেশি হবে— তবে—

আশু। যত অল্পই হোক মাতাজি, আমাদের মতো লোকের পক্ষে যথেষ্ট হবে।

শ্যামা। ( আত্মগত) বিদ্যার কোনো পরিচয় না পেয়েই যখন এত সন্তুষ্ট তখন মেয়েকে পছন্দ করেছে বলেই বোধ হচ্ছে। বাঁচা গেল, আমার বড়ো ভাবনা ছিল। ( প্রকাশ্যে) নিরু, একটি গান শুনিয়ে দাও তো মা!

আশু। গান! এ আমার আশার অতীত। আপনি বোধ হয় পূর্বে থেকেই জানেন, গানের চেয়ে আমি কিছুই ভালোবাসি নে। ( স্বগত) অন্নদার মতো এতবড়ো সন্দেহী, সে থাকলে আজ যোগের বল প্রত্যক্ষ করতে পারত। ( প্রকাশ্যে নিরুপমার প্রতি) আপনারা আমাকে এক দিনেই চিরঋণী করেছেন, যদি গান করেন তবে বিক্রীত হয়ে থাকব।


নিরুপমার গান

আমি       কী বলে করিব নিবেদন

আমার হৃদয় প্রাণ মন!

চিত্তে এসে দয়া       করি নিজে লহো অপহরি,

করো তারে আপনার ধন—

আমার হৃদয় প্রাণ মন।

শুধু ধূলি, শুধু ছাই,       মূল্য যার কিছু নাই

মূল্য তারে করো সমর্পণ

তব স্পর্শে পরশরতন!

তোমার গৌরবে যবে       আমার গৌরব হবে

একেবারে দিব বিসর্জন

চরণে হৃদয় প্রাণ মন।

আশু। ( স্বগত) আর মন্ত্রের দরকার নেই। বশীকরণের আর কী বাকি রইল! কন্যাটি দেবকন্যা। ( প্রকাশ্যে) মাতাজি!

শ্যামা। কী বাবা?

আশু। আমাকে আপনার পুত্র করেই রাখবেন, এমন সুধাসংগীত শোনবার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না। যা পাওয়া গেল এই আমি পরম লাভ মনে করছি। মন্ত্রতন্ত্রের কথা ভুলেই গেছি। এখন বুঝতে পারছি, মন্ত্রের কোনো দরকার নেই।

শ্যামা। অমন কথা বোলো না বাবা! মন্ত্রের দরকার আছে বৈকি। নইলে শাস্ত্রে—