বশীকরণ

আশু। মাতাজি, আপনি তপস্যার দ্বারা যে নিরুপমা-সম্পদ লাভ করেছেন, আমাকে তার—

শ্যামা। তোমাকে দেবার জন্যেই তো প্রস্তুত হয়ে এসেছি। অনেক সন্ধান করে যোগ্যপাত্র পেয়েছি, এখন দিতে পারলেই তো নিশ্চিন্ত হই।

আশু। ( শ্যামার পদধূলি লইয়া) মাতাজি, আমাকে কৃতার্থ করলেন; এত সহজেই যে ফললাভ করব, এ আমি স্বপ্নেও জানতুম না।

শ্যামা। বল কী বাবা, তোমার আগ্রহ যত আমার আগ্রহ তার চেয়ে বেশি।

আশু। তা হলে যে কামনা করে এসেছিলেম, আজ কি তার কিছু পরিচয়—

শ্যামা। পরিচয় হবে বৈকি বাবা, আমার তাতে কোনো আপত্তি নেই।

আশু। আপত্তি নেই মাতাজি? শুনে বড়ো আরাম পেলেম—

শ্যামা। দেখাশুনা সমস্তই হবে বাবা, আগে কিছু খেয়ে নাও।

আশু। আবার খাওয়া! আপনি আমাকে যথার্থ জননীর মতোই স্নেহ দেখালেন।

শ্যামা। তুমিও আমাকে মার মতোই দেখবে, এই আমার প্রাণের ইচ্ছা। আমার তো ছেলে নেই, তুমিই আমার ছেলের মতো থাকবে।


আহার্য লইয়া ভৃত্যের প্রবেশ

আশু। করেছেন কী! এত আয়োজন!

শ্যামা। আয়োজন আর কি করলেম? আজই ঠিক আসতে পারবে কি না মনে একটু সন্দেহ ছিল, তাই—

আশু। সন্দেহ ছিল? আপনি কি জানতেন আমি আসব?

শ্যামা। তা জানতেম বৈকি।

আশু। ( আত্মগত) কী আশ্চর্য! আমাকে না জেনেই আমার জন্যে পূর্ব হতেই অপেক্ষা করছিলেন? তবু অন্নদা যোগবলে বিশ্বাস করে না! তাকে বললে বোধ হয় ঠাট্টা করেই উড়িয়ে দেবে।

 

আহারে প্রবৃত্ত

শ্যামা। ( আত্মগত) ছেলেটি সোনার টুকরো। যেমন কার্তিকের মতো দেখতে তেমনি মধু-ঢালা কথা। আমাকে প্রথম থেকেই মাতাজি বলে ডাকছে। পশ্চিম থেকে এসেছি কিনা, তাই বোধ হয় মা না বলে মাতাজি বলছে। ( প্রকাশ্যে) কিছুই খেলে না যে বাবা!

আশু। আমার যা সাধ্য, তার চেয়ে বরঞ্চ বেশিই খেয়েছি মাতাজি।

শ্যামা। তা হলে একটু বোসো আমি ডেকে নিয়ে আসি।

[ প্রস্থান

আশু। রাধে বলেছিল বটে, মাতাজি কুমারী কন্যার দ্বারা মন্ত্রের ফল দেখিয়ে থাকেন। বশীকরণ-বিদ্যায় আমার একটু বিশ্বাস জন্মাচ্ছে। এরই মধ্যে মাতাজির মাতৃস্নেহে আমার চিত্ত কেমন যেন আর্দ্র হয়ে এসেছে। আমার মা নেই, মনে হচ্ছে যেন মাকে পেলেম। এ কোন্‌ মন্ত্রবলে কে জানে! মাতাজি স্নিগ্ধ দৃষ্টিদ্বারা আমার সমস্ত শরীর যেন অভিষিক্ত করে দিয়েছেন। প্রথম দেখাতেই উনি যে আমাকে তাঁর পুত্রস্থানীয় করে নিয়েছেন, এ যেন পূর্বজন্মের একটা সম্বন্ধের স্মৃতি।