চিরকুমার-সভা
অসাধারণ ক্ষমতা দিয়েছেন সেটা দেখছি খাটাতে দিলে না। ভগ্নীপতির কথা বেদবাক্য ব'লে বিশ্বাস করতে কোন্‌ মনুসংহিতায় লিখেছে বলো দেখি।

নীরবালা। রাগ কোরো না, শান্ত হও মুখুজ্জেমশায়, শান্ত হও। সেজদিদির কথা ছেড়ে দাও, কিন্তু ভেবে দেখো আমি তোমার আধখানা কথা সিকি পয়সাও বিশ্বাস করি নে, এতেও তুমি সান্ত্বনা পাও না?

নৃপবালা। আচ্ছা মুখুজ্জেমশায়, সত্যি করে বলো, দিদির নামে তুমি কখনো কবিতা রচনা করেছ?

অক্ষয়। এবার তিনি যখন অত্যন্ত রাগ করেছিলেন তখন তাঁর স্তব রচনা করে গান করেছিলুম।

নৃপবালা। তার পরে?

অক্ষয়। তার পরে দেখলুম, তাতে উলটো ফল হল, বাতাস পেয়ে যেমন আগুন বেড়ে ওঠে তেমনি হল — সেই অবধি স্তবরচনা ছেড়েই দিয়েছি।

নৃপবালা। ছেড়ে দিয়ে কেবল গয়লাবাড়ির হিসেব লিখছ? কী স্তব লিখেছিলে মুখুজ্জেমশায়, আমাদের শোনাও - না।

অক্ষয়। সাহস হয় না, শেষকালে আমার উপরওয়ালার কাছে রিপোর্ট্ করবি।

নৃপবালা। না, আমরা দিদিকে বলে দেব না।

অক্ষয়। তবে অবধান করো।

গান

মনোমন্দিরসুন্দরী।

স্খলদঞ্চলা       চলচঞ্চলা

অয়ি মঞ্জুলা মঞ্জরী।

রোষারুণরাগরঞ্জিতা

গোপনহাস্যে-      -কুটিল-আস্য-

কপটকলহগঞ্জিতা।

সংকোচনত - অঙ্গিনী।

চকিতচপল-       নবকুরঙ্গ -

যৌবনবনরঙ্গিণী।

অয়ি খলছলগুণ্ঠিতা।

লুব্ধ - পবন        -ক্ষুব্ধ লোভন

মল্লিকা অবলুণ্ঠিতা।

চুম্বনধনবঞ্চিনী।

রুদ্ধ কোরক -       সঞ্চিত মধু -

কঠিনকনককঞ্জিনী।

কিন্তু আর নয়। এবারে মশায়রা বিদায় হোন।

নীরবালা। কেন, এত অপমান কেন। দিদির কাছে তাড়া খেয়ে আমাদের উপরে বুঝি তার ঝাল ঝাড়তে হবে?