কালের যাত্রা

ধনপতি। ভাবনা কী। যখন তোমাদের কোনো উপায় খাটল না তখন মহাকাল নিজের উপায় নিজেই বের করবেন। তাঁর চলবার গরজ তাঁরই, আমাদের নয় ; তাঁর ডাক পড়লেই যেখান থেকে হোক তাঁর বাহন ছুটেম আসবে। আজ যাদের দেখাই যাচ্ছে না, কাল তারা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়বে। তার আগে আমার খাতাপত্র সমলাই গে। এসো হে কোষাধ্যক্ষ, আজ সিন্ধুকগুলো একটু শক্ত করে বন্ধ করতে হবে।

[ ধনপতি ও তার দলের প্রস্থান

 

চরের প্রবেশ

চর। মন্ত্রীমশায়, আমাদের শূদ্রপাড়ায় ভারি গোল বেধে গেছে।

মন্ত্রীর। কেন কী হয়েছে।

চর। দলে দলে আসছে সব ছুটে। তারা বলে, বাবার রথ আমরা চালাব।

সকলে। বলে কী। রশি ছুঁতেই দেব না।

চর। কিন্তু তাদের ঠেকাবে কে।

সৈন্যদল। আমরা আছি।

চর। তোমরা কজনই বা আছ। তাদের মারতে মারতে তোমাদের তলোয়ার ক্ষয়ে যাবে — তবু এত বাকি থাকবে যে রথতলায় তোমাদের আর জায়গাই হবে না।

চর। মন্ত্রীমশায়, তুমি যে একেবারে বসে পড়লে?

মন্ত্রী। ওরা দল বেঁধে আসছে বলে আমি ভয় করি নে।

চর। তবে?

মন্ত্রী। আমার মনে ভয় হচ্ছে ওরা পারবে।

সৈনিক দল। বল কী, মন্ত্রী-মহারাজ, ওরা পারবে মহাকালের রথ টানতে! শিলা জলে ভাসবে!

মন্ত্রী। দৈবাৎ যদি পারে তা হলে বিধাতার নূতন বিধি শুরু হবে। নীচের তলাটা হঠাৎ উপরের তলা হয়ে ওঠাকেই বলে প্রলয়। ভূমিকম্পে মাটির মধ্যে সেই চেষ্টাতেই তো বিভীষিকা। যা বরাবর প্রচ্ছন্ন আছে তাই প্রকাশ হবার সময়টাই যুগান্তরের সময়।

সৈনিক দল। কী করতে চান, আমাদের কী করতে বলেন হুকুম করুন। আমরা কিছুই ভয় করি নে।

মন্ত্রী। সাহস দেখাতে গিয়েই সংসারে ভয় বাড়িয়ে তোলা হয়। গোঁয়ার্তমি করে তলোয়ারের বেড়া তুলে দিয়েই মহাকালের বন্যা ঠেকানো যায় না।

চর। তা কী করতে হবে বলেন।

মন্ত্রী। ওদের কোনো বাধা না দেওয়াই হচ্ছে সৎ পরামর্শ। বাধা দিলে শক্তি আপনাকে আপনি চিনতে পারে। সেই চিনতে দিলেই আর রক্ষে নেই।

সৈনিক দল। তা হলে আমরা দাঁড়িয়ে থাকি? ওরা আসুক?

চর। ঐ যে এসে পড়েছে।

মন্ত্রী। তোমরা কিচ্ছু কোরো না। স্থির হয়ে থাকো।