নবীন

কমলবরণ গগনমাঝে

কমলচরণ ওই বিরাজে।

ওইখানে তোর সুর ভেসে যাক,

নবীনপ্রাণের ওই দেশে যাক,

ওই যেখানে সোনার আলোর দুয়ার খোলে॥

 

মধুরিমা, দেখো দেখো, চন্দ্রমা তিথির পর তিথি পেরিয়ে আজ তার উৎসবের তরণী পূর্ণিমার ঘাটে পৌঁছিয়ে দিয়েছে। নন্দনবন থেকে কোমল আলোর শুভ্র সুকুমার পারিজাতস্তবকে তার ডালি ভরে আনল। সেই ডালিখানিকে ঐ কোলে নিয়ে বসে আছে কোন্‌ মাধুরীর মহাশ্বেতা। রাজহংসের ডানার মতো তার লঘু মেঘের শুভ্র বসনাঞ্চল স্রস্ত হয়ে পড়েছে ঐ আকাশে, আর তার বীণার রুপোর তন্তুগুলিতে অলস অঙ্গুলিক্ষেপে থেকে থেকে গুঞ্জরিত হচ্ছে বেহাগের তান।

 

নিবিড় অমা-তিমির হতে

বাহির হল জোয়ারস্রোতে

শুক্লরাতে চাঁদের তরণী।

ভরিল ভরা অরূপ ফুলে,

সাজালো ডালা অমরাকূলে

আলোর মালা চামেলিবরনী

শুক্লরাতে চাঁদের তরণী।

 

তিথির পরে তিথির ঘাটে

আসিছে তরী দোলের নাটে,

নীরবে হাসে স্বপনে ধরণী।

উৎসবের পসরা নিয়ে

পূর্ণিমার কূলেতে কি এ

ভিড়িল শেষে তন্দ্রাহরণী

শুক্লরাতে চাঁদের তরণী॥

 

দোল লেগেছে এবার। পাওয়া আর না-পাওয়ার মাঝখানে এই দোল। এক প্রান্তে মিলন আর-এক প্রান্তে বিরহ, এই দুই প্রান্ত স্পর্শ করে করে দুলছে বিশ্বের হৃদয়। পরিপূর্ণ আর অপূর্ণের মাঝখানে এই দোলন। আলোতে ছায়াতে ঠেকতে ঠেকতে রূপ জাগছে জীবন থেকে মরণে, বাহির থেকে অন্তরে। এই ছন্দটি বাঁচিয়ে যে চলতে চায় সে তো যাওয়া-আসার দ্বার খোলা রেখে দেয়। কিন্তু, ঐ-যে হিসাবি মানুষটা দ্বারে শিকল দিয়ে আঁক পাড়ছে তার শিকল-নাড়া দাও তোমরা। ঘরের লোককে অন্তত আজ একদিনের মতো ঘরছাড়া করো।