শাপমোচন

রাতের পর রাত যায়। অন্ধকারে তরুতলে যে মানুষ ছায়ার মতো নাচে তাকে চোখে দেখি নে,তার হৃদয় দেখি— জনশূন্য দেওদার-বনের দোলায়িত শাখায় যেন দক্ষিণ সমুদ্রের হাওয়ার হাহাকার। রানী মনে ভাবে,যখন সে কাছে এল তখন ছিল কৃষ্ণসন্ধ্যা। যখন চাঁদ উঠল তখন তার মালাখানি রইল,সে রইল না।

 

যখন এসেছিলে অন্ধকারে

চাঁদ ওঠে নি সিন্ধুপারে।

হে অজানা, তোমায় তবে

জেনেছিলেম অনুভবে,

 

গানে তোমার পরশখানি বেজেছিল প্রাণের তারে।

তুমি   গেলে যখন একলা চলে

চাঁদ উঠেছে রাতের কোলে।

তখন দেখি পথের কাছে

মালা তোমার পড়ে আছে,

বুঝেছিলেম অনুমানে এ কণ্ঠহার দিলে কারে।

 

কী হল রাজমহিষীর। কোন্‌ হতাশের বিরহ তার বিরহ জাগিয়ে তোলে। কোন্‌ রাত-জাগা পাখি নিস্তব্ধ নীড়ের পাশ দিয়ে হূহু করে উড়ে যায়,তার পাখার শব্দে ঘুমন্ত পাখির পাখা উৎসুক হয়ে ওঠে যে।

বীণায় বাজতে থাকে কেদারা বেহাগ,বাজে কালাংড়া। আকাশে আকাশে তারাগুলি যেন তামসী তপস্বিনীর নীরব জপমন্ত্র। বীণাধ্বনি যেন আজ আর বাইরে নেই;এসেছে তার অন্তরের তন্তুতে তন্তুতে।

 

ওই বুঝি বাঁশি বাজে   বনমাঝে কি মনোমাঝে।

বসন্ত বায় বহিছে কোথায়, কোথায় ফুটেছে ফুল,

বলো গো সজনি, এ সুখরজনী কোন্‌খানে উদিয়াছে—

বনমাঝে কি মনোমাঝে॥

 

যাব কি যাব না মিছে এ ভাবনা, মিছে মরি ভয়ে লাজে।

কী জানি কোথা সে বিরহহুতাশে ফিরে অভিসারসাজে—

বনমাঝে কি মনোমাঝে॥

 

রাজমহিষী বিছানায় উঠে বসে,স্রস্ত তার বেণী,ত্রস্ত তার বক্ষ। বীণার গুঞ্জরণ আকাশে মেলে দেয় অন্তহীন অভিসারের পথ। রাগিণীবিছানো সেই শূন্যপথে বেরিয়ে পড়ে তার মন।