শাপমোচন

কার দিকে। দেখার আগে যাকে চিনেছিল,দেখার পরে যাকে ভুলেছিল তারই দিকে।

একদিন নিমফুলের গন্ধ অন্ধকার ঘরে নিয়ে এল অনির্বচনীয়ের আমন্ত্রণ। মহিষী দাঁড়াল বিছানা ছেড়ে বাতায়নের কাছে। নীচে সেই ছায়ামূর্তির নাচ,বিরহের ঊর্মিদোলা।

 

ও কি এল, ও কি এল না, বোঝা গেল না।

ও কি মায়া কি স্বপনছায়া, ও কি ছলনা।

ধরা কি পড়ে ও রূপেরই ডোরে,

গানেরই তানে কি বাঁধিবে ওরে,

ও যে চিরবিরহেরই সাধনা।

 

ওর   বাঁশিতে করুণ কী সুর লাগে

বিরহমিলনমিলিত রাগে।

সুখে কি দুখে ও পাওয়া-না-পাওয়া,

হৃদয়বনে ও উদাসী হাওয়া,

বুঝি শুধু ও পরমকামনা॥

 

মহিষীর সমস্ত দেহ কম্পিত। ঝিল্লিঝংকৃত রাত। কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ দিগন্তে। অস্পষ্ট আলোয় অরণ্য কথা কয় যেন স্বপ্নে। বোবা বনের ভাষাহীন বাণী লাগল মহিষীর অঙ্গে অঙ্গে। কখন নাচ আরম্ভ হল সে জানে না। এ নাচ কোন্‌ জন্মান্তরের,কোন্‌ লোকান্তরের।

বীণায় বাজে পরজের বিহ্বল মীড়। কমলিকা আপন-মনে বলে, ‘ওগো কাতর,ওগো হতাশ,আর ডেকো না। আর দেরি নেই,দেরি নেই।’

কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ ডুবেছে অমাবস্যার তলায়। আঁধারের ডাক গভীর। রাজমহিষী উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “যাব আজ। আর ভয় করি নে আমার দৃষ্টিকে।”

পথের শুকনো পাতা পায়ে পায়ে বাজিয়ে দিয়ে গেল সে অশথতলায়— সেখানে বীণা বাজছে।

 

মোর   বীণা ওঠে কোন্‌ সুরে বাজি

কোন্ নব চঞ্চল ছন্দে।

মম   অন্তর কম্পিত আজি

নিখিলের হৃদয়স্পন্দে।

আসে কোন্‌ তরুণ অশান্ত,

উড়ে পীতবসনপ্রান্ত,

আলোকের নৃত্যে বনান্ত