যোগাযোগ

কুমুদিনী। দাদা, তোমার পায়ে পড়ি, এখন কালুদাকে না, একটু ঘুমোবার চেষ্টা করো।

[ প্রস্থান

 

কালুর প্রবেশ

 

কালু। কী হল বলো তো। কুমুকে ওদের ওখানে ফিরে নিয়ে যাবার কথা কিছু বললে কি?

বিপ্রদাস। হাঁ বলেছিল। কুমু তার জবাব দিয়েছে, সে যাবে না।

কালু। বল কী দাদা! এ যে সর্বনেশে কথা!

বিপ্রদাস। সর্বনাশকে আমরা কোনো কালে ভয় করি নে, ভয় করি অসম্মানকে।

কালু। তা হলে তৈরি হও, আর দেরি নেই। রক্তে আছে, যাবে কোথায়? জানি তো, তোমার বাবা ম্যাজিস্ট্রেটকে তুচ্ছ করতে গিয়ে অন্তত দু-লাখ টাকা লোকসান করেছিলেন। বুক ফুলিয়ে নিজের বিপদ ঘটানো, ও তোমাদের পৈতৃক শখ। ওটা অন্তত আমার বংশে নেই, তাই তোমাদের সাংঘাতিক পাগলামিগুলো চুপ করে সইতে পারি নে। কিন্তু বাঁচব কী করে?

বিপ্রদাস। দলিলের শর্ত অনুসারে মধুসূদন ছ মাস নোটিস না দিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা দাবি করতে পারে না। ইতিমধ্যে সুবোধ আষাঢ় মাসের মধ্যেই এসে পড়বে — তখন একটা উপায় হতে পারবে।

কালু। উপায় হবে বৈকি। বাতিগুলো এক দমকায় নিবত, সেইগুলো একে একে ভদ্র রকম করে নিববে।

বিপ্রদাস। বাতি তলার খোপটার মধ্যে এসে জ্বলছে, এখন যে ফরাস এসে তাকে যেরকম ফুঁ দিয়েই নেবাক-না — তাকে বেশি হাহুতাশ করবার কিছু নেই। ওই তলানির আলোটার তদ্‌বির করতে আর ভালো লাগে না ; ওর চেয়ে পুরো অন্ধকারে সোয়াস্তি পাওয়া যায়।

কালু। তোমাকে কিছু ভাবতে হবে না ভাই, যা করবার আমিই করব। যাই, একবার দালাল-মহলে ঘুরে আসি গে।

[ কালুর প্রস্থান

কুমুদিনীর প্রবেশ

 

বিপ্রদাস। কুমু, ভালো করে সব ভেবে দেখেছিস?

কুমুদিনী। ভাবনা সম্পূর্ণ শেষ করে দিয়েছি, তাই আমার মন আজ খুব নিশ্চিন্ত। ঠিক মনে হচ্ছে যেমন এখানে ছিলুম তেমনি আছি — মাঝে যা-কিছু ঘটেছে সমস্ত স্বপ্ন।

বিপ্রদাস। যদি তোকে জোর করে নিয়ে যাবার চেষ্টা হয়, তুই জোর করে সামলাতে পারবি?

কুমুদিনী। তোমার উপর উৎ পাত যদি না হয় তো খুব পারব।

বিপ্রদাস। এইজন্যে জিজ্ঞাসা করছি যে, যদি শেষকালে ফিরে যেতেই হয় তা হলে যত দেরি করে যাবি ততই সেটা বিশ্রী হয়ে উঠবে। ওদের সঙ্গে সম্বন্ধসূত্র তোর মনকে কোথাও কিছুমাত্র জড়িয়েছে কি?

কুমুদিনী। কিছুমাত্র না। কেবল আমি নবীনকে, মোতির মা'কে, হাবলুকে ভালোবাসি।

বিপ্রদাস। দেখ কুমু, ওরা উৎ পাত করবে। সমাজের জোরে, আইনের জোরে উৎ পাত করবার ক্ষমতা ওদের আছে। সেইজন্যেই সেটাকে অগ্রাহ্য করা চাই। করতে গেলেই লজ্জা সংকোচ ভয় সমস্ত বিসর্জন দিয়ে লোকসমাজের সামনে দাঁড়াতে হবে। ঘরে বাইরে চারি দিকে নিন্দের তুফান উঠবে, তার মাঝখানে মাথা তুলে তোর