যোগাযোগ

মতো করে — অত্যন্ত বেশি সুদ চায়, সে আমাদের পোষাবে না।

বিপ্রদাস। কালুদা, সুবোধকে তার করতে হবে আসবার জন্যে। আর দেরি করলে তো চলবে না।

কালু। আমারও ভালো ঠেকছে না। সেবারে তোমার সেই আংটি-বেচা টাকা নিয়ে যখন মূল দেনার এক অংশ শোধ করতে গেলুম, মধূসূদন নিতে রাজিই হল না ; তখনি বুঝলুম সুবিধে নয়। নিজের মর্জি-মতো একদিন হঠাৎ কখন ফাঁস এঁটে ধরবে।

 

বিপ্রদাস চুপ করে ভাবতে লাগল

 

কালু। দাদা, ছোটোখুকি যে হঠাৎ আজ সকালে চলে এল, রাগারাগি করে আসে নি তো? মধুসূদনকে চটাবার মতো অবস্থা আমাদের নয়, এটা মনে রাখতে হবে।

বিপ্রদাস। কুমু বলছে ওর স্বামীর সম্মতি পেয়েছে।

কালু। সম্মতিটার চেহারা কীরকম না জানলে মন নিশ্চিন্ত হচ্ছে না। কত সাবধানে ওর সঙ্গে ব্যবহার করি সে আর তোমাকে কী বলব দাদা। রাগে সর্ব অঙ্গ যখন জ্বলছে তখনো ঠাণ্ডা হয়ে সব সয়েছি। গৌরীশঙ্করের পাহাড়টার মতো, দুপুর রোদ্দুরেও তার বরফ গলে না। একে মহাজন তাতে ভগ্নীপতি, এ'কে সামলে চলা কি সোজা কথা।

 

কুমু এল বার্লি নিয়ে। বিপ্রদাসের মুখের কাছে পেয়ালা ধরে

 

কুমুদিনী। দাদা, খেয়ে নাও।

কালুদা, আমাকে সব কথা বলতে হবে।

কালু। কী কথা বলতে হবে দিদি।

কুমুদিনী। তোমাদের কী একটা নিয়ে ভাবনা চলছে।

কালু। বিষয় আছে ভাবনা নেই, সংসারে এও কি কখনো সম্ভব হয় খুকি? ও-যে কাঁটাগাছের ফল, ক্ষিদের চোটে পেড়ে খেতে হয়, পাড়তে গিয়ে সর্বাঙ্গ ছড়েও যায়।

কুমুদিনী। সে-সব কথা পরে হবে, আমাকে বলো কী হয়েছে।

বিপ্রদাস। বিষয়কর্মের কথা মেয়েদের বলতে নিষেধ।

কুমুদিনী। আমি নিশ্চয় জানি তোমাদের কী নিয়ে কথা হচ্ছে। বলব?

কালু। আচ্ছা বলো।

কুমুদিনী। আমার স্বামীর কাছে দাদার ধার আছে, সেই নিয়ে।

 

কালু সবিস্ময়ে কুমুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল

 

আমাকে বলতেই হবে, ঠিক বলেছি কি না।

কালু। দাদারই বোন তো, কথা না বলতেই কথা বুঝে নেয়।