যোগাযোগ

কুমুদিনী। এ প্রসন্নতা যে কেন ঠিক বুঝতে পারি নে। তাই ভয় হয়। কী করতে হবে কিছুই ভেবে পাই নে।

মোতির মা। কিছুই ভাবতে হবে না। এটুকু বুঝতে পারছ না, এতদিন উনি কেবল কারবার করে এসেছেন, তোমার মতো মেয়েকে কেনোদিন দেখেন নি। এখন একটু একটু করে যতই তোমায় চিনছেন, ততই তোমার আদর বাড়ছে।

কুমুদিনী। বেশি দেখলে বেশি চিনবেন, এমন কিছুই আমার মধ্যে নেই ভাই। আমি নিজেই যেন দেখতে পাচ্ছি আমার ভিতরটা একেবারে শূন্য! সেইজন্যে হঠাৎ যখন দেখি উনি খুশি হয়েছেন, আমার মনে হয় উনি বুঝি ঠকেছেন ; যেই সেটা ফাঁস হবে অমনি আরো রেগে উঠবেন!

মোতির মা। এ তোমার ভুল ধারণা। বড়োঠাকুর সত্যিই তোমাকে ভালোবাসেন, এ কথা মনে রেখো!

কুমুদিনী। সেইটেই তো আমার আরো আশ্চর্য ঠেকে!

মোতির মা। বলো কী দিদি! তোমাকে ভালোবাসা আশ্চর্য! কেন, উনি কি পাথরের?

কুমুদিনী। আমি ওঁর যোগ্য নই।

মোতির মা। তুমি যার যোগ্য নও সে পুরুষ পৃথিবীতে আছে?

কুমুদিনী। ওঁর কত বড়ো শক্তি, কত সম্মান, কত মস্ত মানুষ উনি। আমার মধ্যে উনি কতটুকু পেতে পারেন?

মোতির মা। দিদি, তুমি হাসালে! বড়োঠাকুরের মস্ত বড়ো কারবার, কারবারি বুদ্ধিতে ওঁর জুড়ি নেই — সব মানি। কিন্তু তুমি কি ওঁর আপিসের ম্যানেজারি করতে এসেছ যে যোগ্য নই বলে ভয় পাবে? বড়োঠাকুর যদি মনের কথা খোলসা করে বলেন তো দেখবে, তিনিও স্বীকার করবেন যে তিনি তোমার যোগ্য নন। আর, তোমার নিজের দাম কী জানো দিদি? যেদিন এদের বাড়িতে এসেছ সেই দিনই তোমার পক্ষ থেকে যা দেওয়া হল, এরা সবাই মিলে তা শুধতে পারলে না। আমার কর্তাটি একেবারে মরিয়া। তোমার জন্য সাগর লঙ্ঘন করতে না পারলে স্থির থাকতে পারছেন না। আমি যদি তোমায় ভালো না বাসতুম তো এই নিয়ে তাঁর সঙ্গে ঝগড়া হয়ে যেত।

কুমুদিনী। কত ভাগ্যে এমন দেওর পেয়েছি।

মোতির মা। আর, তোমার এই জা ' টি? বুঝি ভাগ্যস্থানে রাহু, না কেতু?

কুমুদিনী। তোমাদের একজনের নাম করলে আর-একজনের নাম করবার দরকার হয় না।

মোতির মা। ওই-যে আসছেন তোমার দেওর লক্ষ্মণটি।

 

নবীনের প্রবেশ

 

কুমুদিনী। এসো এসো ঠাকুরপো। কী খুঁজছ?

নবীন। ঘরের আলোটিকে ঘরে দেখতে [না] পেয়ে খুঁজতে বেরিয়েছি।

মোতির মা। হায় হায়, মণিহারা ফণী যাকে বলে!

নবীন। কে মণি আর কে ফণী তা চক্র নাড়া দেখলেই বোঝা যায়, কী বলো বউরানী?

কুমুদিনী। আমাকে সাক্ষী মেনো না ঠাকুরপো।

নবীন। ও-সব কথা এখন থাক্‌। তোমার দাদার চিঠি এনেছি।

কুমুদিনী। দেখি দেখি।

দাদা আজ বিকেলে তিনটের সময় কলকাতায় এসেছেন।