যোগাযোগ

কুমুদিনী। কেন ভাই, ঠাকুরপোর বই লুকিয়ে রেখেছ?

মোতির মা। দেখো তো দিদি, শোবার ঘরে কি ওঁর পাঠশালা? ঘরে এসে দেখি মহাপণ্ডিত পড়তে বসে গেছেন। খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যায়, তাগিদের পর তাগিদ, হুঁশ নেই।

কুমুদিনী। সত্যি ঠাকুরপো?

নবীন। বউরানী, খাবার ভালোবাসি নে এত বড়ো তপস্বী আমি নই। কিন্তু তার চেয়ে ভালোবাসি ওঁর মুখের মিষ্টি তাগিদ। সেইজন্যেই তো ইচ্ছে করে খেতে দেরি হয়, বই পড়াটা একটা অছিলা!

মোতির মা। ওঁর সঙ্গে কথায় হার মানি।

নবীন। আর আমি হার মানি যখন উনি কথা বন্ধ করেন।

কুমুদিনী। তাও কি কখনো ঘটে নাকি ঠাকুরপো?

নবীন। দুটো- একটা তাজা দৃষ্টান্ত দিই তা হলে?

মোতির মা। আচ্ছা, আর তোমার দৃষ্টান্ত দিতে হবে না। এখন আমার চাবি কোথায় লুকিয়ে রেখেছ বলো। দেখো তো দিদি, আমার চাবি লুকিয়ে রেখেছেন।

নবীন। ঘরের লোকের নামে তো police case করতে পারি না, তাই চোরকে চুরি দিয়েই শাস্তি দিতে হয়। আগে দাও আমার বই!

মোতির মা। তোমাকে দেব না, দিদিকে এনে দিচ্ছি। ওঁকে দিয়ো না। দেখি তোমার সঙ্গে কিরকম রাগারাগি করেন।

[ বই আনতে প্রস্থান

নবীন। বৌদি, শুনে তুমি কী ভাববে জানি নে, আমরা পরস্পরের ধন পরস্পর চুরি করে থাকি। এমনি করে আমাদের স্বভাবটা দুই পক্ষেই সমান বিগড়িয়ে যাচ্ছে।

কুমুদিনী। সেজন্যে অনুতাপের কোনো লক্ষণ তো দেখি নে।

নবীন। কড়া পড়ে গেছে মনটাতে। ত্রাণকর্তা যদি অন্তরে প্রবেশ করতে চান সর্জিকাল অপরেশন দরকার হবে।

 

মোতির মার প্রবেশ

 

মোতির মা। এই নাও দিদি, ওঁর বই।

কুমুদিনী। কিন্তু এ তো dictionary, এই বইয়ে বুঝি ঠাকুরপোর শখ!

মোতির মা। ওঁর শখ নেই এমন বই নেই। সেদিন দেখি কোথা থেকে একখানা গো-পালন জুটিয়ে নিয়ে পড়তে বসে গেছেন।

নবীন। নিজের দেহরক্ষার জন্যে ওটা পড়ি নে, অতএব ওতে লজ্জার কারণ নেই।

মোতির মা। দিদি, তোমার কি কিছু বলবার আছে? চাও তো এই বাচালটিকে এখন বিদায় করি।

কুমুদিনী। না, তার দরকার নেই। আমার দাদা একজন লোক পাঠিয়েছেন শুনেছি।

নবীন। কিন্তু তিনি বোধ হয় এতক্ষণ চলে গেছেন।

কুমুদিনী। চলে গেছেন? আমার সঙ্গে দেখা না করেই?

মোতির মা। তুমি বড়োঠাকুরকে কিছু বল নি?

কুমুদিনী। বলেছিলুম। কিন্তু — তুমি ঠিক জান ঠাকুরপো, তিনি চলে গেছেন?

নবীন। তাই মনে হয়। আচ্ছা, আমি দেখে আসি!