প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
দাদামশায়, থামলে কেন।
দিদিমণি, জগতের সব - কিছুর সব - শেষে আছে থামা।
না, এ কিন্তু এখনো থামে নি। কলা ছিনিয়ে খাওয়া ও তো যে - সে পারে।
আচ্ছা, কাল হবে, আজ কাজ আছে।
কাল কী হবে বলো - না, অল্প একটুখানি।
জান তো ওর বিয়ের সম্বন্ধ আগেই হয়েছে? ওর যে মগজ বদল হয়ে গেছে সে খবরটা কনের বাড়িতে পৌঁছয় নি। দিন স্থির, লগ্ন স্থির। বরের পিসে ওকে মস্ত দু ছড়া কলা খাইয়ে ঠাণ্ডা করে বিয়ের জায়গায় নিয়ে গেছেন। তার পরে বিয়েবাড়িতে যে কাণ্ডটা হল তা ভালো করে ফলিয়ে বললে তখন তুমিই বলবে, গল্পের মতো গল্প হয়েছে। এর পরে আর ওকে মেরে ফেলবার দরকার হবে না। সে মরার বাড় হবে।
সন্ধেবেলায় বসেছি ছাদে। দিব্যি দক্ষিণের হাওয়া দিচ্ছে। শুক্লা চতুর্থীর চাঁদ উঠেছে আকাশে। পুপুদিদি একটি আকন্দের মালা গেঁথে এনেছে কাঁচপাত্রে, গল্প বলা শেষ হলে বক্শিশ মিলবে।
হেনকালে হাঁপাতে হাঁপাতে সে উপস্থিত। বললে, আজ থেকে আমার গল্প জোগানের কাজে আমি ইস্তফা দিলুম। আমাকে পাতু গেঁজেলের গা পরিয়েছিলে, সেও সহ্য করেছি। শেষকালে বাঁদরের মগজ পুরেছ আমার খুলির মধ্যে, এ সইবে না। এর পরে হয়তো আমাকে চাম্চিকে কি টিক্টিকি কি গুব্রে পোকা বানিয়ে দেবে। তোমাদের অসাধ্য কিছুই নেই। আজ আপিসে গিয়ে কেদারা টেনে বসেছি। দেখি ডেস্কের উপরে এক ছড়া মর্তমান কলা। সহজ অবস্থায় কলা আমি ভালোই বাসি, কিন্তু এখন থেকে আমাকে কলা খাওয়া ছেড়েই দিতে হবে। পুপুদিদি, এর পরে তোমার ঐ দাদামশায় আমাকে নিয়ে যদি ব্রহ্মদত্যি কিম্বা কন্ধকাটা বানান, তা হলে কাগজে না ছাপান যেন। ইতিমধ্যে কন্যাকর্তা এসেছিলেন আমার ঘরে। বিয়েতে আশি ভরি সোনা দেবার কথা পাকা ছিল ; একদম নেমে গেছে তেরো ভরিতে। ওরা বুঝেছে, আমার ভাগ্যে এর পরে কনে জোটা দায় হবে। এই তবে বিদায় নিলেম।
সন্ধেবেলায় বসে আছি দক্ষিণ দিকের চাতালে। সামনে কতকগুলো পুরোনো কালের প্রবীণ শিরীষগাছ আকাশের তারা আড়াল করে জোনাকির আলো দিয়ে যেন একশোটা চোখ টিপে ইশারা করছে।
পুপেদি'কে বললেম, বুদ্ধি তোমার অত্যন্ত পেকে উঠছে, তাই মনে করছি আজ তোমাকে স্মরণ করিয়ে দেব, একদিন তুমি ছেলেমানুষ ছিলে।
দিদি হেসে উঠে বললে, ঐখানে তোমার জিত। তুমিও এক কালে ছেলেমানুষ ছিলে, সে কথা স্মরণ করিয়ে দেবার উপায় আমার হাতে নেই।