সে
ও কানে বাজায় ঢঙ। দু জাতের ঘণ্টাকর্ণ আছে, একটা আছে হিংস্র, কাঁসরের মতো খন্‌খন্‌ আওয়াজ দেয় ; আর একটার গম‍্গম‍্ গম্ভীর শব্দ।

তুমি কখনো তার শব্দ শুনতে পাও, দাদামশায়?

পাই বৈকি। এই কাল রাত্তিরেই বই পড়তে পড়তে হঠাৎ শুনলেম ঘণ্টাকর্ণ চলেছেন ঘোর অন্ধকারের ভিতর দিয়ে। বারোটা বাজালেন যখন তখন আর থাকতে পারলুম না। তাড়াতাড়ি বই ফেলে দিয়ে চমকে উঠে দৌড় দিলুম বিছানায়, বালিশের মধ্যে মুখ গুঁজে চোখ বুজে রইলুম পড়ে।

খরগোশের সঙ্গে ঘণ্টাকর্ণের ভাব আছে?

খুব ভাব। খরগোশটা তারই আওয়াজের দিকে কান পেতে চলতে থাকে সপ্তর্ষিপাড়ার ছায়াপথ দিয়ে।

তার পরে?

তার পরে যখন একটা বাজে, দুটো বাজে, তিনটে বাজে, চারটে বাজে, পাঁচটা বাজে, তখন রাস্তা শেষ হয়ে যায়।

তার পরে?

তার পরে পৌঁছয় তন্দ্রা - তেপান্তরের ও পারে আলোর দেশে। আর দেখা যায় না।

আমি কি পৌঁচেছি সেই দেশে।

নিশ্চয় পৌঁচেছ।

এখন তা হলে আমি খরগোশের পিঠে নেই?

থাকলে যে তার পিঠ ভেঙে যেত।

ওঃ, ভুলে গেছি, এখন যে আমি ভারী হয়েছি। তার পরে?

তার পরে তোমাকে উদ্ধার করা চাই তো।

নিশ্চয় চাই। কেমন করে করবে।

সেই কথাটাই তো ভাবছি। রাজপুত্তুরের শরণ নিতে হল দেখছি।

কোথায় পাবে।

ঐ - যে তোমাদের সুকুমার।

শুনে এক মুহূর্তে তোমার মুখ গম্ভীর হয়ে উঠল। একটু কঠিন সুরেই বললে, তুমি তাকে খুব ভালোবাস। তোমার কাছে সে পড়া বলে নিতে আসে। তাই তো সে আমাকে অঙ্কে এগিয়ে যায়।

এগিয়ে যাবার অন্য স্বাভাবিক কারণও আছে। সে কথাটার আলোচনা করলুম না। বললুম, তা, তাকে ভালোবাসি আর না বাসি, সেই আছে এক রাজপুত্তুর।

কেমন করে জানলে।

আমার সঙ্গে বোঝাপড়া করে তবে সে ঐ পদটা পাকা করে নিয়েছে।

তুমি বেশ একটু ভুরু কুঁচকে বললে, তোমারই সঙ্গে ওর যত বোঝাপড়া!

কী করি বলো, কোনোমতে ও মানতে চায় না — ওর চেয়ে আমি বয়সে খুব বেশি বড়ো।

ওকে তুমি বল রাজপুত্তুর! ওকে আমি জটায়ুপাখি বলেও মনে করি নে। ভারি তো!

একটু শান্ত হও, এখন ঘোর বিপদে পড়া গেছে! তুমি কোথায় তার তো ঠিকানাই নেই। তা এবারকার মতো কাজ উদ্ধার