গোড়ায় গলদ
অযত্ন হয় নি—আমি তো সেখান থেকে সমস্ত রেঁধে তোমাকে পাঠিয়ে দিয়েছি।

চন্দ্রকান্ত। বড়োবউ, আমি কি তোমার রান্নার জন্যে তোমাকে বিয়ে করেছিলুম। যে বৎসর তোমার সঙ্গে অভাগার শুভবিবাহ হয় সে বৎসর কলকাতা শহরে কি রাঁধুনি বামুনের মড়ক হয়েছিল।

ক্ষান্তমণি। আমি বলছি, আমার একশ বার ঘাট হয়েছে, আমাকে মাপ করো—আমি আর কখনো এমন কাজ করব না। এখন তুমি ঘরে চলো।

চন্দ্রকান্ত। তবে একটু রোসো। নিবারণবাবু আমার জলখাবারের ব্যবস্থা করতে গেছেন— উপস্থিত ত্যাগ করে যাওয়াটা শাস্ত্রবিরুদ্ধ।

ক্ষান্তমণি। আমি সেখানে সব ঠিক করে রেখেছি, তুমি এখনি চলো।

চন্দ্রকান্ত। বল কী, নিবারণবাবু—

ক্ষান্তমণি। সে আমি নিবারণবাবুকে বলে পাঠাব এখন, তুমি চলো।

চন্দ্রকান্ত। তবে চলো। সকল গোরুগুলিই তো একে একে গোষ্ঠে গেল। আমিও যাই।

বন্ধুগণ। (নেপথ্য হইতে) চন্দরদা।

ক্ষান্তমণি। ঐ রে, আবার ওরা আসছে! ওদের হাতে পড়লে আর তোমার রক্ষে নেই।

চন্দ্রকান্ত। ওদের হাতে তুমি আমি দুজনেই পড়ার চেয়ে একজন পড়া ভালো। শাস্ত্রে লিখছে ‘সর্বনাশে সমুৎপন্নে অর্ধং ত্যজতি পণ্ডিতঃ’, অতএব এ স্থলে আমার অর্ধাঙ্গের সরাই ভালো।

ক্ষান্তমণি। তোমার ঐ বন্ধুগুলোর জ্বালায় আমি কি মাথামোড় খুঁড়ে মরব।

[ প্রস্থান


বিনোদবিহারী নিমাই ও নলিনাক্ষের প্রবেশ

চন্দ্রকান্ত। কেমন মনে হচ্ছে বিনু।

বিনোদবিহারী। সে আর কী বলব দাদা।

চন্দ্রকান্ত। নিমাই, তোর স্নায়ুরোগের বর্তমান লক্ষণটা কী বল্‌ দেখি।

নিমাই। অত্যন্ত সাংঘাতিক। ইচ্ছে করছে দিগ্‌বিদিকে নেচে বেড়াই।

চন্দ্রকান্ত। ভাই, নাচতে হয় তো দিকে নেচো, আবার বিদিকে নেচো না। পূর্বে তোমার যেরকম দিগ্‌ভ্রম হয়েছিল—কোথায় মির্জাপুর আর কোথায় বাগবাজার!

নিমাই। এখন তোমার খবরটা কী চন্দরদা!

চন্দ্রকান্ত। আমি কিছু দ্বিধায় পড়ে গেছি। এখানেও আহার তৈরি হচ্ছে ঘরেও আহার প্রস্তুত—কিন্তু ঘরের দিকে ডবল টান পড়েছে।

নলিনাক্ষ। বিনু, এই মরুজগৎ তোমার কাছে তো আবার নন্দনকানন হয়ে উঠল—তুমি তো ভাই সুখী হলে—

চন্দ্রকান্ত। সেজন্যে ওকে আর লজ্জা দিস নে নলিন, সে ওর দোষ নয়। সুখী না হবার জন্যে ও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল, এমন-কি, প্রায় সম্পূর্ণ কৃতকার্য হয়েছিল; এমন সময় বিধাতা ওর সঙ্গে লাগলেন—নিতান্ত ওকে কানে ধরে সুখী করে দিলেন। সেজন্যে