চিত্রাঙ্গদা
প্রথম সে নিদ্রাভঙ্গে চারি দিক চেয়ে
মনে হল, কবে কোন্ বিস্মৃত প্রদোষে
জীবন ত্যজিয়া, স্বপ্নজন্ম লভিয়াছি
কোন্ এক অপরূপ মোহনিদ্রালোকে,
জনশূন্য ম্লানজ্যোৎস্না বৈতরণীতীরে।
দাঁড়ানু উঠিয়া। মিথ্যা শরম সংকোচ
খসিয়া পড়িল শ্লথ বসনের মতো
পদতলে। শুনিলাম, “প্রিয়ে, প্রিয়তমে!”
গম্ভীর আহ্বানে, মোর এক দেহমাঝে
জন্ম জন্ম শতজন্ম উঠিল জাগিয়া।
কহিলাম, “লহো, লহো, যাহা কিছু আছে
সব লহো জীবনবল্লভ!” দুই বাহু
দিলাম বাড়ায়ে।—চন্দ্র অস্ত গেল বনে,
অন্ধকারে ঝাঁপিল মেদিনী। স্বর্গমর্ত
দেশকাল দুঃখসুখ জীবনমরণ
অচেতন হয়ে গেল অসহ্য পুলকে।
প্রভাতের প্রথম কিরণে, বিহঙ্গের
প্রথম সংগীতে, বাম করে দিয়া ভর
ধীরে ধীরে শয্যাতলে উঠিয়া বসিনু।
দেখিনু চাহিয়া, সুখসুপ্ত বীরবর।
শ্রান্ত হাস্য লেগে আছে ওষ্ঠপ্রান্তে তাঁর
প্রভাতের চন্দ্রকলাসম, রজনীর
আনন্দের শীর্ণ অবশেষ। নিপতিত
উন্নত ললাটপটে অরুণের আভা;
মর্ত্যলোকে যেন নব উদয়পর্বতে
নবকীর্তি-সূর্যোদয় পাইবে প্রকাশ।
উঠিনু শয়ন ছাড়ি নিশ্বাস ফেলিয়া;
মালতীর লতাজাল দিলাম নামায়ে
সাবধানে, রবিকর করি অন্তরাল
সুপ্তমুখ হতে। দেখিলাম চতুর্দিকে
সেই পূর্বপরিচিত প্রাচীন পৃথিবী।