চিত্রাঙ্গদা
মণিপুর। অরণ্যে শিবালয়
অর্জুন
অর্জুন।     কাহারে হেরিনু? সে কি সত্য, কিম্বা মায়া?
নিবিড় নির্জন বনে নির্মল সরসী—
এমনি নিভৃত নিরালয়, মনে হয়,
নিস্তব্ধ মধ্যাহ্নে সেথা বনলক্ষীগণ
স্নান করে যায়, গভীর পূর্ণিমারাত্রে
সেই সুপ্ত সরসীর স্নিগ্ধ শষ্পতটে
শয়ন করেন সুখে নিঃশঙ্ক বিশ্রামে
স্খলিত-অঞ্চলে।
            সেথা তরু-অন্তরালে
অপরাহ্নবেলাশেষে, ভাবিতেছিলাম
আশৈশবজীবনের কথা; সংসারের
মূঢ় খেলা দুঃখসুখ উলটি পালটি;
জীবনের অসন্তোষ, অসম্পূর্ণ আশা,
অনন্ত দারিদ্র্য এই মর্ত মানবের।
হেনকালে ঘনতরু-অন্ধকার হতে
ধীরে ধীরে বাহিরিয়া, কে আসি দাঁড়াল
সরোবর-সোপানের শ্বেত শিলাপটে।
কী অপূর্ব রূপ। কোমল চরণতলে
ধরাতল কেমনে নিশ্চল হয়ে ছিল?
উষার কনক মেঘ, দেখিতে দেখিতে
যেমন মিলায়ে যায়, পূর্ব পর্বতের
শুভ্র শিরে অকলঙ্ক নগ্ন শোভাখানি
করি বিকাশিত, তেমনি বসন তার
মিলাতে চাহিতেছিল অঙ্গের লাবণ্যে
সুখাবেশে। নামি ধীরে সরোবরতীরে
কৌতূহলে দেখিল সে নিজ মুখচ্ছায়া,
উঠিল চমকি। ক্ষণপরে মৃদু হাসি