চিত্রাঙ্গদা
বসন্ত ও মদনের প্রবেশ
হে অনঙ্গদেব, এ কী রূপহুতাশনে
ঘিরেছ আমারে, দগ্ধ হই, দগ্ধ করে
মারি।
 মদন।           বলো, তন্বী, কালিকার বিবরণ।
চিত্রাঙ্গদা।                     কাল সন্ধ্যাবেলা
সরসীর তৃণপুঞ্জ তীরে পেতেছিনু
পুষ্পশয্যা, বসন্তের ঝরা ফুল দিয়ে।
শ্রান্ত কলেবরে শুয়েছিনু আনমনে,
রাখিয়া অলস শির বামবাহু-’পরে
ভাবিতেছিলাম গতদিবসের কথা।
শুনেছিনু যেই স্তুতি অর্জুনের মুখে
আনিতেছিলাম তাহা মনে; দিবসের
সঞ্চিত অমৃত হতে বিন্দু বিন্দু লয়ে
করিতেছিলাম পান; ভুলিতেছিলাম
পূর্ব ইতিহাস, গতজন্মকথাসম।
যেন আমি রাজকন্যা নহি; যেন মোর
নাই পূর্বপর; যেন আমি ধরাতলে
একদিনে উঠেছি ফুটিয়া, অরণ্যের
পিতৃমাতৃহীন ফুল; শুধু এক বেলা
পরমায়ু, তারি মাঝে শুনে নিতে হবে
ভ্রমরগুঞ্জনগীতি, বনবনান্তের
আনন্দমর্মর; পরে নীলাম্বর হতে
ধীরে নামাইয়া আঁখি, নুয়াইয়া গ্রীবা,
টুটিয়া লুটিয়া যাব বায়ুস্পর্শভরে
ক্রন্দনবিহীন, মাঝখানে ফুরাইবে
কুসুমকাহিনীখানি আদিঅন্তহারা।
বসন্ত।      একটি প্রভাতে ফুটে অনন্ত জীবন,
হে সুন্দরী।
মদন।                 সংগীতে যেমন, ক্ষণিকের
তানে, গুঞ্জরি, কাঁদিয়া ওঠে অন্তহীন