চিত্রাঙ্গদা
প্রলাপবাদিনী। কিন্তু আমি যথার্থ কি
তাই? যেমন সহস্র নারী পথে গৃহে,
চারি দিকে, শুধু ক্রন্দনের অধিকারী,
তার চেয়ে বেশি নই আমি? কিন্তু হায়,
আপনার পরিচয় দেওয়া, বহু ধৈর্যে
বহু দিনে ঘটে, চিরজীবনের কাজ,
জন্মজন্মান্তরে ব্রত। তাই অসিয়াছি
দ্বারে তোমাদের, করেছি কঠোর তপ।
হে ভুবনজয়ী দেব, হে মহাসুন্দর
ঋতুরাজ, শুধু এক দিবসের তরে
ঘুচাইয়া দাও—জন্মদাতা বিধাতার
বিনাদোষে অভিশাপ, নারীর কুরূপ।
করো মোরে অপূর্ব সুন্দরী। দাও মোরে
সেই একদিন—তার পরে চিরদিন
রহিল আমার হাতে।—যখন প্রথম
দেখিলাম তারে, যেন মুহূর্তের মাঝে
অনন্ত বসন্ত ঋতু পশিল হৃদয়ে।
বড়ো ইচ্ছা হয়েছিল সে যৌবনোচ্ছ্বাসে
সমস্ত শরীর যদি দেখিতে দেখিতে
অপূর্বপুলকভরে উঠে প্রষ্ফুটিয়া
লক্ষীর চরণশায়ী পদ্মের মতন।
হে বসন্ত, হে বসন্তসখে, সে বাসনা
পুরাও আমার শুধু দিনেকের তরে।
মদন। তথাস্তু।
বসন্ত। তথাস্তু। শুধু একদিন নহে,
বসন্তের পুষ্পশোভা এক বর্ষ ধরি
ঘেরিয়া তোমার তনু রহিবে বিকশি।