বাঁশরি

সোমশংকর। তবে নাও। (বাঁশরি চিঠিটা ছিঁড়ে ফেলল) এখনো একটা কাজ বাকি আছে। এই সিগারেট কেস চেয়ে পাঠিয়েছিলে। কেন,বুঝতে পারি নি।

বাঁশরি। আর-একবার তোমার ঐ পকেটে রাখব বলে, এ আমার দ্বিতীয়বারকার দান।

সোমশংকর। সন্ন্যাসীবাবা আমাদের বাড়িতে আসবেন এখনই–বিদায় দাও, যাই তাঁর কাছে।

বাঁশরি। যাও, জয় হোক সন্ন্যাসীর।

[ সোমশংকরের প্রস্থান
লীলার প্রবেশ

লীলা। কী ভাই—

বাঁশরি। একটু বোসো। আর-একখানা চিঠি লেখা বাকি আছে, সেটা তাকে দিতে হবে তোরই হাত দিয়ে। (চিঠি লিখে লীলাকে দিলে) পড়ে দেখ্‌।

চিঠি

শ্রীমান ক্ষিতিশচন্দ্র ভৌমিক কল্যাণবরেষু-

  তোমার ভাগ্য ভালো, ফাঁড়া কেটে গেল, আমারও বিবাহের আসন্ন আশঙ্কাটা সম্পূর্ণ লোপ করে দিলুম। ‘ভালোবাসার নিলামে’ সর্বোচ্চ দরই পেয়েছি, তোমার ডাক সে-পর্যন্ত পৌঁছত না। অন্যত্র অন্য-কোনো সান্ত্বনার সুযোগ উপস্থিতমতো যদি না জোটে তবে বই লেখো। আশা করি এবার সত্যের সঙ্গে তোমার পরিচয় হয়েছে। তোমার এই লেখায় বাঁশরির প্রতি দয়া করবার দরকার হবে না। আত্মহত্যায় এক পৈঁঠে পা বাড়িয়েই সে ফিরে এসেছে।

লীলা। (বাঁশরিকে জড়িয়ে ধরে) আঃ, বাঁচালি ভাই, আমাদের সবাইকে। সুষমার উপর এখন আর তোর রাগ নেই?

বাঁশরি। কেন থাকবে। সে কি আমার চেয়ে জিতেছে। লীলা, দে ভাই সব দরজা খুলে সব আলোগুলো জ্বালিয়ে–বাগান থেকে যতগুলো ফুল পাস নিয়ে আয় সংগ্রহ করে।

[ লীলার প্রস্থান
পুরন্দরের প্রবেশ

বাঁশরি। এ কী সন্ন্যাসী, তুমি যে আমার ঘরে?

পুরন্দর। চলে যাচ্ছি দূরে, হয়তো আর দেখা হবে না।

বাঁশরি। যাবার বেলায় আমার কথা মনে পড়ল?

পুরন্দর। তোমার কথা কখনোই ভুলি নি। ভোলবার মতো মেয়ে নও তুমি। নিত্যই এ কথা মনে রেখেছি, তোমাকে চাই আমাদের কাজে–দুর্লভ দুঃসাধ্য তুমি, তাই দুঃখ দিয়েছি।

বাঁশরি। পার নি দুঃখ দিতে। মরা কঠিন নয়, পেয়েছি তার প্রথম শিক্ষা। কিন্তু তোমাকে একটা শেষকথা বলব সন্ন্যাসী, শোনো। সুষমাকে তুমি ভালোবাস, সুষমা জানে সেই কথা। তোমার ভালোবাসার সূত্রে গেঁথে ব্রতের হার পরেছে সে গলায়, তার আর ভাবনা কিসের। সত্য কি না বলো।

পুরন্দর। সত্য কি মিথ্যা সে-কথা বলে কোনো ফল নেই, দুইই সমান।