বন-ফুল
বাঁধিয়াছি চুল করিয়া যতন,
কবরীতে তুলে দিয়াছি রতন,
     চুলে সঁপিয়াছি ফুলের মালা,
কাজল মেখেছি নয়নের পাতে,
সোনার বলয় পরিয়াছি হাতে,
রজতকুসুম সঁপিয়াছি মাথে,
     কি কহিব সখি! এমন জ্বালা!’

চতুর্থ সর্গ
নিভৃত যমুনাতীরে    বসিয়া রয়েছে কি রে
     কমলা নীরদ দুই জনে?
যেন দোঁহে জ্ঞানহত— নীরব চিত্রের মতো
     দোঁহে দোঁহা হেরে একমনে।

দেখিতে দেখিতে কেন    অবশ পাষাণ হেন,
     চখের পলক নাহি পড়ে।
শোণিত না চলে বুকে,    কথাটি না ফুটে মুখে,
     চুলটিও না নড়ে না চড়ে!

মুখ ফিরাইল বালা,    দেখিল জোছনামালা
     খসিয়া পড়িছে নীল যমুনার নীরে—
অস্ফুট কল্লোলস্বর    উঠিছে আকাশ-'পর
     অর্পিয়া গভীর ভাব রজনী-গভীরে!

দেখিছে লুটায় ঢেউ আবার লুটায়,
     দিগন্তে খেলায়ে পুন দিগন্তে মিলায়!
দেখে শূন্য নেত্র তুলি— খণ্ড খণ্ড মেঘগুলি
     জোছনা মাখিয়া গায়ে উড়ে উড়ে যায়।

     একখণ্ড উড়ে যায় আর খণ্ড আসে
ঢাকিয়া চাঁদের ভাতি    মলিন করিয়া রাতি
     মলিন করিয়া দিয়া সুনীল আকাশে।