বন-ফুল
গাছের উপরে ধীরে ধীরে ধীরে
     জড়িয়ে জড়িয়ে দিতেম লতা,
বসি একাকিনী আপনা-আপনি
     কহিতাম ধীরে কত কি কথা!
ফুটিলে গো ফুল হরষে আকুল
     হতেম, পিতারে কতেম গিয়ে!
ধরি হাতখানি আনিতাম টানি,
     দেখাতেম তাঁরে ফুলটি নিয়ে!
তুষার কুড়িয়ে আঁচল ভরিয়ে
     ফেলিতাম ঢালি গাছের তলে—
পড়িলে কিরণ, কত যে বরণ
     ধরিত, আমোদে যেতাম গলে!
দেখিতাম রবি বিকালে যখন
     শিখরের শিরে পড়িত ঢলে
করি ছুটাছুটি শিখরেতে উঠি
     দেখিতাম দূরে গিয়াছে চোলে!
আবার ছুটিয়ে যেতাম সেখানে
     দেখিতাম আরও গিয়াছে সোরে!
শ্রান্ত হয়ে শেষে কুটীরেতে এসে
     বসিতাম মুখ মলিন করে!
শশধরছায়া পড়িলে সলিলে
     ফেলিতাম জলে পাথরকুচি—
সরসীর জল উঠিত উথুলে,
     শশধরছায়া উঠিত নাচি।
ছিল সরসীতে এক-হাঁটু জল,
     ছুটিয়া ছুটিয়া যেতেম মাঝে,
চাঁদের ছায়ারে গিয়া ধরিবারে
     আসিতাম পুন ফিরিয়া লাজে।
তটদেশে পুন ফিরি আসি পর
     অভিমানভরে ঈষৎ রাগি
চাঁদের ছায়ায় ছুঁড়িয়া পাথর