বন-ফুল
‘কি বলিব বোন! তবে সব শোন্‌!’
     কহিল কমলা মধুর স্বরে,
‘লভেছি জনম করিতে রোদন
     রোদন করিব জীবন ভোরে!
ভুলিব সে বন?— ভুলিব সে গিরি?
     সুখের আলয় পাতার কুঁড়ে?
মৃগে যাব ভুলে— কোলে লয়ে তুলে
     কচি কচি পাতা দিতাম ছিঁড়ে।
হরিণের ছানা একত্রে দুজনা
     খেলিয়ে খেলিয়ে বেড়াত সুখে!
শিঙ ধরি ধরি খেলা করি করি
     আঁচল জড়িয়ে দিতাম মুখে!
ভুলিব তাদের থাকিতে পরাণ?
     হৃদয়ে সে সব থাকিতে লেখা?
পারিব ভুলিতে যত দিন চিতে
     ভাবনার আহা থাকিবে রেখা?
আজ কত বড় হয়েছে তাহারা,
     হয়ত আমার না দেখা পেয়ে
কুটীরের মাঝে খুঁজে খুঁজে খুঁজে
     বেড়াতেছে আহা ব্যাকুল হয়ে!
শুয়ে থাকিতাম দুপরবেলায়
     তাহাদের কোলে রাখিয়ে মাথা,
কাছে বসি নিজে গলপ কত যে
     করিতেন আহা তখন মাতা!
গিরিশিরে উঠি করি ছুটাছুটি
     হরিণের ছানাগুলির সাথে
তটিনীর পাশে দেখিতাম বসে
     মুখছায়া যবে পড়িত তাতে!
সরসীভিতরে ফুটিলে কমল
     তীরে বসি ঢেউ দিতাম জলে,
দেখি মুখ তুলে— কমলিনী দুলে
     এপাশে ওপাশে পড়িতে ঢলে!