বিদায়-অভিশাপ
              অনাহারে কঠোর সাধনা কত? হায়,
              বিদ্যাই দুর্লভ শুধু, প্রেম কি হেথায়
              এতই সুলভ? সহস্র বৎসর ধরে
              সাধনা করেছ তুমি কী ধনের তরে
              আপনি জান না তাহা। বিদ্যা এক ধারে,
              আমি এক ধারে— কভু মোরে কভু তারে
              চেয়েছ সোৎসুকে; তব অনিশ্চিত মন
              দোঁহারেই করিয়াছে যত্নে আরাধন
              সংগোপনে। আজ মোরা দোঁহে এক দিনে
              আসিয়াছি ধরা দিতে। লহো, সখা, চিনে
              যারে চাও। বল যদি সরল সাহসে
              ‘বিদ্যায় নাহিকো সুখ, নাহি সুখ যশে—
              দেবযানী, তুমি শুধু সিদ্ধি মূর্তিমতী,
              তোমারেই করিনু বরণ’, নাহি ক্ষতি,
              নাহি কোনো লজ্জা তাহে। রমণীর মন
              সহস্রবর্ষেরই, সখা, সাধনার ধন।
কচ।         দেবসন্নিধানে শুভে করেছিনু পণ
              মহাসঞ্জীবনী বিদ্যা করি উপার্জন
              দেবলোকে ফিরে যাব। এসেছিনু, তাই;
              সেই পণ মনে মোর জেগেছে সদাই;
              পূর্ণ সেই প্রতিজ্ঞা আমার, চরিতার্থ
              এতকাল পরে এ জীবন— কোনো স্বার্থ
              করি না কামনা আজি।
দেবযানী ।                             ধিক্‌ মিথ্যাভাষী!
              শুধু বিদ্যা চেয়েছিলে? গুরুগৃহে আসি
              শুধু ছাত্ররূপে তুমি আছিলে নির্জনে
              শাস্ত্রগ্রন্থে রাখি আঁখি রত অধ্যয়নে
              অহরহ? উদাসীন আর সবা-’পরে?
              ছাড়ি অধ্যয়নশালা বনে বনান্তরে
              ফিরিতে পুষ্পের তরে, গাঁথি মাল্যখানি
              সহাস্য প্রফুল্লমুখে কেন দিতে আনি
              এ বিদ্যাহীনারে? এই কি কঠোর ব্রত?