বিদায়-অভিশাপ
              চকিতে দেখেছি কতবার, শুধু যেন
              চক্ষের পলকপাতে; তাই আজি  হেন
              স্পর্ধা রমণীর। থাকো তবে, থাকো তবে,
              যেয়ো নাকো। সুখ নাই যশের গৌরবে।
              হেথা বেণুমতীতীরে মোরা দুই জন
              অভিনব স্বর্গলোক করিব সৃজন
              এ নির্জন বনচ্ছায়াসাথে মিশাইয়া
              নিভৃত বিশ্রব্ধ মুগ্ধ দুইখানি হিয়া
              নিখিলবিস্মৃত। ওগো বন্ধু, আমি জানি
              রহস্য তোমার।
কচ।                          নহে, নহে দেবযানী।
দেবযানী।   নহে? মিথ্যা প্রবঞ্চনা! দেখি নাই আমি
              মন তব? জান না কি প্রেম অন্তর্যামী?
              বিকশিত পুষ্প থাকে পল্লবে বিলীন—
              গন্ধ তার লুকাবে কোথায়? কতদিন
              যেমনি তুলেছ মুখ, চেয়েছ যেমনি,
              যেমনি শুনেছ তুমি মোর কণ্ঠধ্বনি,
              অমনি সর্বাঙ্গে তব কম্পিয়াছে হিয়া—
              নড়িলে হীরক যথা পড়ে ঠিকরিয়া
              আলোক তাহার। সে কি আমি দেখি নাই?
              ধরা পড়িয়াছ বন্ধু, বন্দী তুমি তাই
              মোর কাছে। এ বন্ধন নারিবে কাটিতে।
              ইন্দ্র আর তব ইন্দ্র নহে।
কচ।                                     শুচিস্মিতে,
              সহস্র বৎসর ধরি এ দৈত্যপুরীতে
              এরি লাগি করেছি সাধনা?
দেবযানী ।                                  কেন নহে?
              বিদ্যারই লাগিয়া শুধু লোকে দুঃখ সহে
              এ জগতে? করে নি কি রমণীর লাগি
              কোনো নর মহাতপ? পত্নীবর মাগি
              করেন নি সম্বরণ তপতীর আশে
              প্রখর সূর্যের পানে তাকায়ে আকাশে