বিদায়-অভিশাপ
              এই তব ব্যবহার বিদ্যার্থীর মতো?
              প্রভাতে রহিতে অধ্যয়নে, আমি আসি
              শূন্য সাজি হাতে লয়ে দাঁড়াতেম হাসি,
              তুমি কেন গ্রন্থ  রাখি উঠিয়া আসিতে,
              প্রফুল্ল শিশিরসিক্ত কুসুমরাশিতে
              করিতে আমার পূজা? অপরাহ্নকালে
              জলসেক করিতাম তরু-আলবালে,
              আমারে হেরিয়া শ্রান্ত কেন দয়া করি
              দিতে জল তুলে? কেন পাঠ পরিহরি
              পালন করিতে মোর মৃগশিশুটিকে?
              স্বর্গ হতে যে সংগীত এসেছিলে শিখে
              কেন তাহা শুনাইতে, সন্ধ্যাবেলা যবে
              নদীতীরে অন্ধকার নামিত নীরবে
              প্রেমনত নয়নের স্নিগ্ধচ্ছায়াময়
              দীর্ঘ পল্লবের মতো। আমার হৃদয়
              বিদ্যা নিতে এসে কেন করিলে হরণ
              স্বর্গের চাতুরিজালে? বুঝেছি এখন,
              আমারে করিয়া বশ পিতার হৃদয়ে
              চেয়েছিলে পশিবারে—কৃতকার্য হয়ে
              আজ যাবে মোরে কিছু দিয়ে কৃতজ্ঞতা,
              লব্ধমনোরথ অর্থী রাজদ্বারে যথা
              দ্বারীহস্তে দিয়ে যায় মুদ্রা দুই-চারি
              মনের সন্তোষে।
কচ ।                          হা অভিমানিনী নারী,
              সত্য শুনে কী হইবে সুখ। ধর্ম জানে,
              প্রতারণা করি নাই; অকপট- প্রাণে
              আনন্দ-অন্তরে তব সাধিয়া সন্তোষ,
              সেবিয়া তোমারে যদি করে থাকি দোষ,
              তার শাস্তি দিতেছেন বিধি। ছিল মনে
              কব না সে কথা। বলো, কী হইবে জেনে
              ত্রিভুবনে কারো যাহে নাই উপকার,
              একমাত্র শুধু যাহা নিতান্ত আমার