বিদায়-অভিশাপ
              চিত্তে যাহা দিয়েছিল সুখ; পরিধান
              করে থাকে কোনোদিন হেন বস্ত্রখানি
              যাহা দেখে মনে তব প্রশংসার বাণী
              জেগেছিল, ভেবেছিলে প্রসন্ন-অন্তর
              তৃপ্ত চোখে, আজি এরে দেখায় সুন্দর,
              সেই কথা মনে কোরো অবসরক্ষণে
              সুখস্বর্গ-ধামে। কতদিন এই বনে
              দিগ্‌দিগন্তরে, আষাঢ়ের নীল জটা,
              শ্যামস্নিগ্ধ বরষার নবঘনঘটা
              নেবেছিল, অবিরল বৃষ্টিজলধারে
              কর্মহীন দিনে সঘনকল্পনাভারে
              পীড়িত হৃদয়—এসেছিল কতদিন
              অকস্মাৎ বসন্তের বাধাবন্ধহীন
              উল্লাসহিল্লোলাকুল যৌবন-উৎসাহ,
              সংগীতমুখর সেই আবেগপ্রবাহ
              লতায় পাতায় পুষ্পে বনে বনান্তরে
              ব্যাপ্ত করি দিয়াছিল লহরে লহরে
              আনন্দপ্লাবন—ভেবে দেখো একবার
              কত উষা, কত জ্যোৎস্না, কত অন্ধকার
              পুষ্পগন্ধঘন অমানিশা, এই বনে
              গেছে মিশে সুখে দুঃখে তোমার জীবনে—
              তারি মাঝে হেন প্রাতঃ, হেন সন্ধ্যাবেলা,
              হেন মুগ্ধরাত্রি, হেন হৃদয়ের খেলা,
              হেন সুখ, হেন মুখ দেয় নাই দেখা
              যাহা মনে আঁকা রবে চিরচিত্ররেখা
              চিররাত্রি চিরদিন? শুধু উপকার!
              শোভা নহে, প্রীতি নহে, কিছু নহে আর?
কচ।        আর যাহা আছে তাহা প্রকাশের নয়
              সখী। বহে যাহা মর্মমাঝে রক্তময়
              বাহিরে তা কেমনে দেখাব।
দেবযানী ।                                      জানি সখে,
              তোমার হৃদয় মোর হৃদয়-আলোকে