বিদায়-অভিশাপ
নূতন বন্ধনজাল, অন্তিম মিনতি,
অপূর্ব সৌন্দর্যরাশি। ওগো বনস্পতি,
আশ্রিতজনের
বন্ধু, করি নমস্কার।
কত পান্থ বসিবেক ছায়ায় তোমার,
কত ছাত্র কত দিন আমার মতন
প্রচ্ছন্ন প্রচ্ছায়তলে নীরব নির্জন
তৃণাসনে, পতঙ্গের মৃদুগুঞ্জস্বরে,
করিবেক অধ্যয়ন—প্রাতঃস্নান-পরে
ঋষিবালকেরা আসি সজল বল্কল
শুকাবে তোমার শাখে—রাখালের দল
মধ্যাহ্নে করিবে খেলা—ওগো, তারি মাঝে
এ পুরানো বন্ধু যেন স্মরণে বিরাজে।
দেবযানী। মনে রেখো আমাদের হোমধেনুটিরে;
স্বর্গসুধা পান করে সে পুণ্যগাভীরে
ভুলো না গরবে।
কচ।
সুধা হতে সুধাময়
দুগ্ধ তার— দেখে তারে পাপক্ষয় হয়,
মাতৃরূপা, শান্তিস্বরূপিণী, শুভ্রকান্তি,
পয়স্বিনী। না মানিয়া ক্ষুধাতৃষ্ণাশ্রান্তি
তারে করিয়াছি সেবা; গহন কাননে
শ্যামশষ্প স্রোতস্বিনীতীরে তারি সনে
ফিরিয়াছি দীর্ঘ দিন ; পরিতৃপ্তিভরে
স্বেচ্ছামতে ভোগ করি নিম্নতট- ’পরে
অপর্যাপ্ত তৃণরাশি সুস্নিগ্ধ কোমল—
আলস্যমন্থরতনু লভি তরুতল
রোমন্থ করেছে ধীরে শুয়ে তৃণাসনে
সারাবেলা ; মাঝে মাঝে বিশাল নয়নে
সকৃতজ্ঞ শান্ত দৃষ্টি মেলি, গাঢ়স্নেহ
চক্ষু দিয়া লেহন করেছে মোর দেহ।
মনে রবে সেই দৃষ্টি স্নিগ্ধ অচঞ্চল,
পরিপুষ্ট শুভ্র তনু চিক্কণ পিচ্ছল।