বিদায়-অভিশাপ
দেবযানী।                                    হায়,
              সুন্দরী অরণ্যভূমি সহস্র বৎসর
              দিয়েছে বল্লভছায়া পল্লবমর্মর,
              শুনায়েছে বিহঙ্গকূজন—তারে আজি
              এতই সহজে ছেড়ে যাবে? তরুরাজি
              ম্লান হয়ে আছে যেন, হেরো আজিকার
              বনচ্ছায়া গাঢ়তর শোকে অন্ধকার,
              কেঁদে ওঠে বায়ু, শুষ্ক পত্র ঝ’রে পড়ে,
              তুমি শুধু চলে যাবে সহাস্য অধরে
              নিশান্তের সুখস্বপ্নসম?
কচ।                                    দেবযানী,
              এ বনভূমিরে আমি মাতৃভুমি মানি,
              হেথা মোর নবজন্মলাভ। এর ’পরে
              নাহি মোর অনাদর, চিরপ্রীতিভরে
              চিরদিন করিব স্মরণ।
দেবযানী।                             এই সেই
              বটতল, যেথা তুমি প্রতি দিবসেই
              গোধন চরাতে এসে পড়িতে ঘুমায়ে
              মধ্যাহ্নের খরতাপে ; ক্লান্ত তব কায়ে
              অতিথিবৎসল তরু দীর্ঘ ছায়াখানি
              দিত বিছাইয়া, সুখসুপ্তি দিত আনি
              ঝর্ঝরপল্লবদলে করিয়া বীজন
              মৃদুস্বরে। যেয়ো সখা, তবু কিছুক্ষণ
              পরিচিত তরুতলে বোসো শেষবার,
              নিয়ে যাও সম্ভাষণ এ স্নেহছায়ার,
              দুই দণ্ড থেকে যাও—সে বিলম্বে তব
              স্বর্গের হবে না কোনো ক্ষতি।
কচ।                                            অভিনব
              বলে যেন মনে হয় বিদায়ের ক্ষণে
              এই-সব চিরপরিচিত বন্ধুগণে—
              পলাতক প্রিয়জনে বাঁধিবার তরে
              করিছে বিস্তার সবে ব্যগ্র স্নেহভরে