বিদায়-অভিশাপ
দেবযানী।   আর মনে রেখো আমাদের কলস্বনা
              স্রোতস্বিনী বেণুমতী।
কচ।                                 তারে ভুলিব না।
              বেণুমতী, কত কুসুমিত কুঞ্জ দিয়ে
              মধুকণ্ঠে আনন্দিত কলগান নিয়ে
              আসিছে শুশ্রূষা বহি গ্রাম্যবধূসম
              সদা ক্ষিপ্রগতি, প্রবাসসঙ্গিনী মম
              নিত্যশুভব্রতা।
দেবযানী ।                    হায় বন্ধু, এ প্রবাসে
              আরো কোনো সহচরী ছিল তব পাশে,
              পরগৃহবাসদুঃখ ভুলাবার তরে
              যত্ন তার ছিল মনে রাত্রিদিন ধরে—
              হায় রে দুরাশা!
কচ ।                           চিরজীবনের সনে
              তাঁর নাম গাঁথা হয়ে গেছে।
দেবযানী ।                                 আছে মনে
              যেদিন প্রথম তুমি আসিলে হেথায়
              কিশোর ব্রাহ্মণ, তরুণ অরুণপ্রায়
              গৌরবর্ণ তনুখানি স্নিগ্ধ দীপ্তিঢালা,
              চন্দনে চর্চিত ভাল, কণ্ঠে পুষ্পমালা,
              পরিহিত পট্টবাস, অধরে নয়নে
              প্রসন্ন সরল হাসি, হোথা পুষ্পবনে
              দাঁড়ালে আসিয়া—
কচ ।                             তুমি সদ্য স্নান করি
              দীর্ঘ আর্দ্র কেশজালে, নবশুক্লাম্বরী
              জ্যোতিস্নাত মূর্তিমতী উষা, হাতে সাজি
              একাকী তুলিতেছিলে নব পুষ্পরাজি
              পূজার লাগিয়া। কহিনু করি বিনতি,
              ‘তোমারে সাজে না শ্রম, দেহো অনুমতি,
              ফুল তুলে দিব দেবী।’
দেবযানী ।                            আমি সবিস্ময়
              সেই ক্ষণে শুধানু তোমার পরিচয়।