বিদায়-অভিশাপ
              উঠিবে আনন্দধ্বনি, মনোহর সুরে
              বাজিবে মঙ্গলশঙ্খ, সুরাঙ্গনাগণ
              করিবে তোমার শিরে পুষ্প বরিষন
              সদ্যছিন্ন নন্দনের মন্দারমঞ্জরী।
              স্বর্গপথে কলকণ্ঠে অপ্সরী কিন্নরী
              দিবে হুলুধ্বনি। আহা, বিপ্র, বহুক্লেশে
              কেটেছে তোমার দিন বিজনে বিদেশে
              সুকঠোর অধ্যয়নে। নাহি ছিল কেহ
              স্মরণ করায়ে দিতে সুখময় গেহ,
              নিবারিতে প্রবাসবেদনা। অতিথিরে
              যথাসাধ্য পুজিয়াছি দরিদ্রকুটিরে
              যাহা ছিল দিয়ে। তাই ব’লে স্বর্গসুখ
              কোথা পাব, কোথা হেথা অনিন্দিত মুখ
              সুরললনার। বড়ো আশা করি মনে
              আতিথ্যের অপরাধ রবে না স্মরণে
              ফিরে গিয়ে সুখলোকে।
কচ।                                   সুকল্যাণ হাসে
              প্রসন্ন বিদায় আজি দিতে হবে দাসে।
দেবযানী।    হাসি? হায় সখা, এ তো স্বগর্পুরী নয়।
              পুষ্পে কীটসম হেথা তৃষ্ণা জেগে রয়
              মর্মমাঝে, বাঞ্ছা ঘুরে বাঞ্ছিতেরে ঘিরে,
              লাঞ্ছিত ভ্রমর যথা বারম্বার ফিরে
              মুদ্রিত পদ্মের কাছে। হেথা সুখ গেলে
              স্মৃতি একাকিনী বসি দীর্ঘশ্বাস ফেলে
              শূন্যগৃহে—হেথায় সুলভ নহে হাসি।
              যাও বন্ধু, কী হইবে মিথ্যা কাল নাশি—
              উৎকণ্ঠিত দেবগণ।
                                    যেতেছ চলিয়া?
              সকলি সমাপ্ত হল দু কথা বলিয়া?
              দশশত বর্ষ পরে এই কি বিদায়!
কচ।         দেবযানী, কী আমার অপরাধ!