শেষ সপ্তক

                   যেখানে নিমেষের অন্তরালে

          সহস্রবৎসরের প্রাণ নীরবে রয়েছে সমাহিত।

 

কাক ডাকছে তেঁতুলের ডালে,

      চিল মিলিয়ে গেল রৌদ্রপাণ্ডুর সুদূর নীলিমায়।

        বিলের জলে বাঁধ বেঁধে

            ডিঙি নিয়ে মাছ ধরছে জেলে।

        বিলের পরপারে পুরাতন গ্রামের আভাস,

               ফিকে রঙের নীলাম্বরের প্রান্তে

                     বেগনি রঙের আঁচলা।

               গাঙচিল উড়ে বেড়াচ্ছে

                     মাছধরা জালের উপরকার আকাশে।

    মাছরাঙা স্তব্ধ বসে আছে বাঁশের খোঁটায়,

               তার স্থির ছায়া নিস্তরঙ্গ জলে।

ভিজে বাতাসে শ্যাওলার ঘন স্নিগ্ধগন্ধ।

 

চার দিক থেকে অস্তিত্বের এই ধারা

           নানা শাখায় বইছে দিনেরাত্রে।

        অতি পুরাতন প্রাণের বহুদিনের নানা পণ্য নিয়ে

                 এই সহজ প্রবাহ,

        মানব-ইতিহাসের নূতন নূতন

                      ভাঙন - গড়নের উপর দিয়ে

                           এর নিত্য যাওয়া আসা।

 

     চঞ্চল বসন্তের অবসানে

আজ আমি অলস মনে

          আকণ্ঠ ডুব দেব এই ধারার গভীরে ;

              এর কলধ্বনি বাজবে আমার বুকের কাছে

                আমার রক্তের মৃদুতালের ছন্দে।

                এর আলো - ছায়ার উপর দিয়ে

                    ভাসতে ভাসতে চলে যাক আমার চেতনা

                চিন্তাহীন তর্কহীন শাস্ত্রহীন

                            মৃত্যু-মহাসাগরসংগমে।