পত্রপুট

                 গিরিশৃঙ্গমালার মহৎ মৌনে ধ্যাননিমগ্না পৃথিবী,

      নীলাম্বুরাশির অতন্দ্রতরঙ্গে কলমন্দ্রমুখরা পৃথিবী,

                     অন্নপূর্ণা তুমি সুন্দরী, অন্নরিক্তা তুমি ভীষণা।

 

      এক দিকে আপক্কধান্যভারনম্র তোমার শস্যক্ষেত্র,

             সেখানে প্রসন্ন প্রভাতসূর্য প্রতিদিন মুছে নেয় শিশিরবিন্দু

                               কিরণ-উত্তরীয় বুলিয়ে দিয়ে।

      অস্তগামী সূর্য শ্যামশস্যহিল্লোলে রেখে যায় অকথিত এই বাণী —

                                       ‘ আমি আনন্দিত '।

           অন্য দিকে তোমার জলহীন ফলহীন আতঙ্কপান্ডুর মরুক্ষেত্রে

              পরিকীর্ণ পশুকঙ্কালের মধ্যে মরীচিকার প্রেতনৃত্য।

       বৈশাখে দেখেছি বিদ্যুৎচঞ্চুবিদ্ধ দিগন্তকে ছিনিয়ে নিতে এল

                        কালো শ্যেনপাখির মতো তোমার ঝড়,

              সমস্ত আকাশটা ডেকে উঠল যেন কেশর-ফোলা সিংহ,

                  তার লেজের ঝাপটে ডালপালা আলুথালু ক ' রে

                       হতাশ বনস্পতি ধুলায় পড়ল উবুড় হয়ে।

       হাওয়ার মুখে ছুটল ভাঙা কুঁড়ের চাল

                           শিকল-ছেঁড়া কয়েদি-ডাকাতের মতো।

       আবার ফাল্গুনে দেখেছি তোমার আতপ্ত দক্ষিনে হাওয়া

                          ছড়িয়ে দিয়েছে বিরহমিলনের স্বগতপ্রলাপ

                                        আম্রমুকুলের গন্ধে।

        চাঁদের পেয়ালা ছাপিয়ে দিয়ে উপচিয়ে পড়েছে

                                         স্বর্গীয় মদের ফেনা।

                        বনের মর্মরধ্বনি বাতাসের স্পর্ধায় ধৈর্য হারিয়েছে

                                             অকস্মাৎ কল্লোলোচ্ছ্বাসে।

 

        স্নিগ্ধ তুমি, হিংস্র তুমি, পুরাতনী, তুমি নিত্যনবীনা,

     অনাদি সৃষ্টির যজ্ঞহুতাগ্নি থেকে বেরিয়ে এসেছিলে

                        সংখ্যাগণনার অতীত প্রত্যুষে,

     তোমার চক্রতীর্থের পথে পথে ছড়িয়ে এসেছ

              শতশত ভাঙা ইতিহাসের অর্থলুপ্ত অবশেষ —

        বিনা বেদনায় বিছিয়ে এসেছ তোমার বর্জিত সৃষ্টি