পত্রপুট

                 জড়ের ঔদ্ধত্য হল অভিভূত ;

               জীবধাত্রী বসলেন শ্যামল আস্তরণ পেতে।

                      উষা দাঁড়ালেন পূর্বাচলের শিখরচূড়ায়,

      পশ্চিমসাগরতীরে সন্ধ্যা নামলেন মাথায় নিয়ে শান্তিঘট।

                               নম্র হল শিকলে-বাঁধা দানব,

         তবু সেই আদিম বর্বর আঁকড়ে রইল তোমার ইতিহাস।

             ব্যবস্থার মধ্যে সে হঠাৎ আনে বিশৃঙ্খলতা,

         তোমার স্বভাবের কালো গর্ত থেকে

                             হঠাৎ বেরিয়ে আসে এঁকেবেঁকে।

         তোমার নাড়ীতে লেগে আছে তার পাগলামি।

      দেবতার মন্ত্র উঠছে আকাশে বাতাসে অরণ্যে

                                          দিনে রাত্রে

                            উদাত্ত অনুদাত্ত মন্দ্রস্বরে।

      তবু তোমার বক্ষের পাতাল থেকে আধপোষা নাগদানব

           ক্ষণে ক্ষণে উঠছে ফণা তুলে,

      তার তাড়নায় তোমার আপন জীবকে করছ আঘাত,

           ছারখার করছ আপন সৃষ্টিকে।

 

      শুভে অশুভে স্থাপিত তোমার পাদপীঠে,

           তোমার প্রচণ্ড সুন্দর মহিমার উদ্দেশে

      আজ রেখে যাব আমার ক্ষতচিহ্নলাঞ্ছিত জীবনের প্রণতি।

           বিরাট প্রাণের, বিরাট মৃত্যুর গুপ্তসঞ্চার

                                              তোমার যে মাটির তলায়

               তাকে আজ স্পর্শ করি, উপলব্ধি করি সর্ব দেহে মনে।

                        অগণিত যুগযুগান্তরের

                        অসংখ্য মানুষের লুপ্ত দেহ পুঞ্জিত তার ধুলায়।

           আমিও রেখে যাব কয় মুষ্টি ধূলি

                        আমার সমস্ত সুখদুঃখের শেষ পরিণাম —

      রেখে যাব এই নামগ্রাসী, আকারগ্রাসী, সকল-পরিচয়-গ্রাসী

                             নিঃশব্দ মহাধূলিরাশির মধ্যে।

 

      অচল অবরোধে আবদ্ধ পৃথিবী, মেঘলোকে উধাও পৃথিবী,