কবিতা

        মরীচিকা পান্থগণে করিত ছলনা। '

থামিল প্রকৃতি করি অশ্রু বরিষন

গলিল তুষারমালা, তরুণী সরসী-বালা

        ফেলিল নীহারবিন্দু নির্ঝরিণীজলে।

কাঁপিল পাদপদল, উথলে গঙ্গার জল

        তরুস্কন্ধ ছাড়ি লতা লুটায় ভূতলে।

ঈষৎ আঁধাররাশি, গোমুখী শিখর গ্রাসি

        আটক করিল নব অরুণের কর।

মেঘরাশি উপজিয়া, আঁধারে প্রশ্রয় দিয়া,

        ঢাকিয়া ফেলিল ক্রমে পর্বতশিখর।

আবার গাইল ধীরে প্রকৃতিসুন্দরী। —

        ‘ কাঁদ্‌ কাঁদ্‌ আরো কাঁদ্‌ অভাগী ভারত।

হায় দুখনিশা তোর, হল না হল না ভোর,

        হাসিবার দিন তোর হল না আগত।

লজ্জাহীনা! কেন আর! ফেলে দে-না অলংকার

        প্রশান্ত গভীর অই সাগরের তলে।

পূতধারা মন্দাকিনী ছাড়িয়া মরতভূমি

        আবদ্ধ হউক পুন ব্রহ্ম-কমণ্ডলে।

উচ্চশির হিমালয়, প্রলয়ে পাউক লয়,

        চিরকাল দেখেছে যে ভারতের গতি।

কাঁদ্‌ তুই তার পরে, অসহ্য বিষাদভরে

        অতীত কালের চিত্র দেখাউক স্মৃতি।

দেখ্‌ আর্য-সিংহাসনে, স্বাধীন নৃপতিগণে

        স্মৃতির আলেখ্যপটে রয়েছে চিত্রিত।

দেখ্‌ দেখি তপোবনে, ঋষিরা স্বাধীন মনে,

          কেমন ঈশ্বর ধ্যানে রয়েছে ব্যাপৃত।

কেমন স্বাধীন মনে, গাইছে বিহঙ্গগণে,

        স্বাধীন শোভায় শোভে কুসুম নিকর।

সূর্য উঠি প্রাতঃকালে, তাড়ায় আঁধারজালে

         কেমন স্বাধীনভাবে বিস্তারিয়া কর।

তখন কি মনে পড়ে, ভারতী মানস-সরে

        কেমন মধুর স্বরে বীণা ঝংকারিত।