১৯

বয়স আমার বুঝি হয়তো তখন হবে বারো,

অথবা কী জানি হবে দুয়েক বছর বেশি আরো।

পুরাতন নীলকুঠি-দোতলার ‘ পর

ছিল মোর ঘর।

সামনে উধাও ছাত —

দিন আর রাত

আলো আর অন্ধকারে

সাথিহীন বালকের ভাবনারে

এলোমেলো জাগাইয়া যেত,

অর্থশূন্য প্রাণ তারা পেত,

যেমন সমুখে নীচে

আলো পেয়ে বাড়িয়া উঠিছে

বেতগাছ ঝোপঝাড়ে

পুকুরের পাড়ে

সবুজের আলপনায় রঙ দিয়ে লেপে।

সারি সারি ঝাউগাছ ঝরঝর কেঁপে

নীলচাষ-আমলের প্রাচীন মর্মর

তখনো চলিছে বহি বৎসর বৎসর।

বৃদ্ধ সে গাছের মতো তেমনি আদিম পুরাতন  

বয়স-অতীত সেই বালকের মন

নিখিল প্রাণের পেত নাড়া,

আকাশের অনিমেষ দৃষ্টির ডাকে দিত সাড়া,

তাকায়ে রহিত দূরে।

রাখালের বাঁশির করুণ সুরে

অস্তিত্বের যে বেদনা প্রচ্ছন্ন রয়েছে,

নাড়ীতে উঠিত নেচে।

জাগ্রত ছিল না বুদ্ধি, বুদ্ধির বাহিরের যাহা তাই

মনের দেউড়ি-পারে দ্বারী-কাছে বাধা পায় নাই।

স্বপ্নজনতার বিশ্বে ছিল দ্রষ্টা কিংবা স্রষ্টা রূপে,

পণ্যহীন দিনগুলি ভাসাইয়া দিত চুপে চুপে

পাতার   ভেলায়।