যোগীনদা
যোগীনদাদার জন্ম ছিল ডেরাস্মাইলখাঁয়ে।
পশ্চিমেতে অনেক শহর অনেক গাঁয়ে গাঁয়ে
বেড়িয়েছিলেন মিলিটারি জরিপ করার কাজে,
শেষ বয়সে স্থিতি হল শিশুদলের মাঝে।
“ জুলুম তোদের সইব না আর ” হাঁক চালাতেন রোজই,
পরের দিনেই আবার চলত ঐ ছেলেদের খোঁজই।
দরবারে তাঁর কোনো ছেলের ফাঁক পড়বার জো কী —
ডেকে বলতেন, “ কোথায় টুনু, কোথায় গেল খোঁকি। ”
“ ওরে ভজু, ওরে বাঁদর, ওরে লক্ষ্মীছাড়া ”
হাঁক দিয়ে তাঁর ভারি গলায় মাতিয়ে দিতেন পাড়া।
চারদিকে তাঁর ছোটো বড়ো জুটত যত লোভী
কেউ বা পেত মার্বেল, কেউ গণেশমার্কা ছবি।
              কেউ বা লজঞ্জুস,
সেটা ছিল মজলিসে তাঁর হাজরি দেবার ঘুষ।
কাজলি যদি অকারণে করত অভিমান
হেসে বলতেন “ হাঁ করো তো ”, দিতেন ছাঁচি পান।
আপনসৃষ্ট নাতনিও তাঁর ছিল অনেকগুলি,
পাগলি ছিল, পটলি ছিল, আর ছিল জঙ্গুলি।
কেয়া-খয়ের এনে দিত, দিত কাসুন্দিও,
মায়ের হাতের জারকলেবু যোগীনদাদার প্রিয়।
 
তখনো তাঁর শক্ত ছিল মুগুর-ভাঁজা দেহ,
বয়স যে ষাট পেরিয়ে গেছে বুঝত না তা কেহ।
ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি, চোখদুটি জ্বল্‌জ্বলে,
মুখ যেন তাঁর পাকা আমটি, হয়নি সে থল্‌থলে।
চওড়া কপাল, সামনে মাথায় বিরল চুলের টাক,
গোঁফ জোড়াটার খ্যাতি ছিল, তাই নিয়ে তাঁর জাঁক।
 
দিন ফুরোত, কুলুঙ্গিতে প্রদীপ দিত জ্বালি।
বেলের মালা হেঁকে যেত মোড়ের মাথায় মালী।