পুনশ্চ

কায়ামুক্ত ছায়া আসবে আলোর বাহু ধরে

তোমার দৃষ্টির উৎসবে।

রূপ এল ফিরে দেহহীন ছবিতে, উঠল শঙ্খধ্বনি।

ছুটে এল চারি দিক থেকে রূপের প্রেমিক।

 

আবার দিন যায়, বৎসর যায়। প্রাণের কান্না থামে না।

আরো কী চাই।

প্রাণ জোড়হাত করে বলে :

মাটির দূত আসে, নির্মম হাতে কণ্ঠযন্ত্রে কুলুপ লাগায় —

বলে ‘কণ্ঠনালী আমার'।

শুনে আমি বলি, মাটির বাঁশিখানি তোমার বটে,

কিন্তু বাণী তো তোমার নয়।

উপেক্ষা করে সে হাসে।

শোনো আমার ক্রন্দন, হে বিশ্ববাণী,

জয়ী হবে কি জড়মাটির অহংকার —

সেই অন্ধ সেই মূক তোমার বাণীর উপর কি চাপা দেবে চিরমূকত্ব,

যে বাণী অমৃতের বাহন তার বুকের উপর স্থাপন করবে জড়ের জয়স্তম্ভ?

 

শোনা গেল আকাশ থেকে :

ভয় নেই।

বায়ুসমুদ্রে ঘুরে ঘুরে চলে অশ্রুতবাণীর চক্রলহরী,

কিছুই হারায় না।

আশীর্বাদ এই আমার, সার্থক হবে মনের সাধনা;

জীর্ণকণ্ঠ মিশবে মাটিতে, চিরজীবী কণ্ঠস্বর বহন করবে বাণী।

 

মাটির দানব মাটির রথে যাকে হরণ করে চলেছিল

মনের রথ সেই নিরুদ্দেশ বাণীকে আনলে ফিরিয়ে কণ্ঠহীন গানে।

জয়ধ্বনি উঠল মর্তলোকে।

দেহমুক্ত রূপের সঙ্গে যুগলমিলন হল দেহমুক্ত বাণীর

প্রাণতরঙ্গিণীর তীরে, দেহনিকেতনের প্রাঙ্গণে।