কাঁচা আম

         তিনটে কাঁচা আম পড়ে ছিল গাছতলায়

                       চৈত্রমাসের সকালে মৃদু রোদ্‌দুরে।

               যখন-দেখলুম অস্থির ব্যগ্রতায়

                           হাত গেল না কুড়িয়ে নিতে।

                   তখন চা খেতে খেতে মনে ভাবলুম,

                          বদল হয়েছে পালের হাওয়া

                   পুব দিকের খেয়ার ঘাট ঝাপসা হয়ে এলে।

           সেদিন গেছে যেদিন দৈবে-পাওয়া দুটি-একটি কাঁচা আম

                           ছিল আমার সোনার চাবি,

                       খুলে দিত সমস্ত দিনের খুশির গোপন কুঠুরি ;

                          আজ সে তালা নেই, চাবিও লাগে না।

 

                   গোড়াকার কথাটা বলি।

           আমার বয়সে এ বাড়িতে যেদিন প্রথম আসছে বউ

                        পরের ঘর থেকে,

           সেদিন যে-মনটা ছিল নোঙর-ফেলা নৌকো

               বান ডেকে তাকে দিলে তোলপাড় করে।

                   জীবনের বাঁধা বরাদ্দ ছাপিয়ে দিয়ে

                       এল অদৃষ্টের বদান্যতা।

               পুরোনো ছেঁড়া আটপৌরে দিনরাত্রিগুলো

                        খসে পড়ল সমস্ত বাড়িটা থেকে।

               কদিন তিনবেলা রোশনচৌকিতে

                       চার দিকের প্রাত্যহিক ভাষা দিল বদলিয়ে ;

                                ঘরে ঘরে চলল আলোর গোলমাল

                                        ঝাড়ে লণ্ঠনে।

                       অত্যন্ত পরিচিতের মাঝখানে

                                ফুটে উঠল অত্যন্ত আশ্চর্য।

                       কে এল রঙিন সাজে সজ্জায়,

                                আলতা-পরা পায়ে পায়ে —

           ইঙ্গিত করল যে, সে এই সংসারের পরিমিত দামের মানুষ নয় —