সানাই

     সানাই লাগায় তার সারঙের তান।

কী নিবিড় ঐক্যমন্ত্র করিছে সে দান

     কোন্‌ উদ্ভ্রান্তের কাছে,

          বুঝিবার সময় কি আছে।

     অরূপের মর্ম হতে সমুচ্ছ্বাসি

          উৎসবের মধুচ্ছন্দ বিস্তারিছে বাঁশি।

               সন্ধ্যাতারা-জ্বালা অন্ধকারে

     অনন্তের বিরাট পরশ যথা অন্তর-মাঝারে,

                   তেমনি সুদূর স্বচ্ছ সুর

                        গভীর মধুর

     অমর্ত লোকের কোন্‌ বাক্যের অতীত সত্যবাণী

          অন্যমনা ধরণীর কানে দেয় আনি।

     নামিতে নামিতে এই আনন্দের ধারা

           বেদনার মূর্ছনায় হয় আত্মহারা।

          বসন্তের যে দীর্ঘনিশ্বাস

বিকচ বকুলে আনে বিদায়ের বিমর্ষ আভাস,

          সংশয়ের আবেগ কাঁপায়

     সদ্যঃপাতী শিথিল চাঁপায়,

          তারি স্পর্শ লেগে

সাহানার রাগিণীতে বৈরাগিণী ওঠে যেন জেগে,

     চলে যায় পথহারা অর্থহারা দিগন্তের পানে।

 

কতবার মনে ভাবি, কী যে সে কে জানে।

          মনে হয়, বিশ্বের যে মূল উৎস হতে

সৃষ্টির নির্ঝর ঝরে শূন্যে শূন্যে কোটি কোটি স্রোতে

     এ রাগিণী সেথা হতে আপন ছন্দের পিছু পিছু

          নিয়ে আসে বস্তুর অতীত কিছু

               হেন ইন্দ্রজাল

           যার সুর যার তাল

        রূপে রূপে পূর্ণ হয়ে উঠে

                   কালের অঞ্জলিপুটে।

          প্রথম যুগের সেই ধ্বনি

               শিরায় শিরায় উঠে রণরণি ;