বলাকা

     কালোয় ঢেকেছে আলো—জানে না তো কেউ

রাত্রি আছে কি না আছে ; দিগন্তে ফেনায়ে উঠে ঢেউ—

     তারি মাঝে ফুকারে কাণ্ডারী—

“ নূতন সমুদ্রতীরে তরী নিয়ে দিতে হবে পাড়ি। ”

     বাহিরিয়া এল কারা। মা কাঁদিছে পিছে,

          প্রেয়সী দাঁড়ায়ে দ্বারে নয়ন মুদিছে।

              ঝড়ের গর্জনমাঝে

          বিচ্ছেদের হাহাকার বাজে ;

     ঘরে ঘরে শূন্য হল আরামের শয্যাতল ;

          “ যাত্রা করো, যাত্রা করো যাত্রীদল ”

              উঠেছে আদেশ,

          “ বন্দরের কাল হল শেষ। ”

 

               মৃত্য ভেদ করি

          দুলিয়া চলেছে তরী।

    কোথায় পৌঁছিবে ঘাটে, কবে হবে পার,

          সময় তো নাই শুধাবার।

          এই শুধু জানিয়াছে সার

               তরঙ্গের সাথে লড়ি

          বাহিয়া চলিতে হবে তরী।

          টানিয়া রাখিতে হবে পাল,

     আঁকড়ি ধরিতে হবে হাল ;

              বাঁচি আর মরি

          বাহিয়া চলিতে হবে তরী।

              এসেছে আদেশ—

     বন্দরের কাল হল শেষ।

          অজানা সমুদ্রতীর, অজানা সে-দেশ—

              সেথাকার লাগি

              উঠিয়াছে জাগি

ঝটিকার কণ্ঠে কণ্ঠে শূন্যে শূন্যে প্রচণ্ড আহ্বান।

              মরণের গান

     উঠেছে ধ্বনিয়া পথে নবজীবনের অভিসারে