বলাকা

দুঃখেরে দেখেছি নিত্য, পাপেরে দেখেছি নানা ছলে ;

অশান্তির ঘূর্ণি দেখি জীবনের স্রোতে পলে পলে ;

              মৃত্যু করে লুকাচুরি

              সমস্ত পৃথিবী জুড়ি।

           ভেসে যায় তারা সরে যায়

              জীবনেরে করে যায়

                ক্ষণিক বিদ্রূপ।

আজ দেখো তাহাদের অভ্রভেদী বিরাট স্বরূপ।

          তার পরে দাঁড়াও সম্মুখে,

              বলো অকম্পিত বুকে—

              “ তোরে নাহি করি ভয়,

     এ সংসারে প্রতিদিন তোরে করিয়াছি জয়।

তোর চেয়ে আমি সত্য, এ বিশ্বাসে প্রাণ দিব, দেখ্‌।

  শান্তি সত্য, শিব সত্য, সত্য সেই চিরন্তন এক। ”

     মৃত্যুর অন্তরে পশি অমৃত না পাই যদি খুঁজে,

         সত্য যদি নাহি মেলে দুঃখ - সাথে যুঝে,

              পাপ যদি নাহি মরে যায়

              আপনার প্রকাশ-লজ্জায়,

   অহংকার ভেঙে নাহি পড়ে আপনার অসহ্য সজ্জায়,

                 তবে ঘরছাড়া সবে

               অন্তরের   কী আশ্বাস-রবে

     মরিতে ছুটিছে শত শত

প্রভাত-আলোর পানে লক্ষ লক্ষ নক্ষত্রের মতো।

     বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এ অশ্রুধারা

এর যত মূল্য সে কি ধরার ধুলায় হবে হারা।

          স্বর্গ কি হবে না কেনা।

          বিশ্বের ভাণ্ডারী শুধিবে না

              এত ঋণ?

     রাত্রির তপস্যা সে কি আনিবে না দিন।

          নিদারুণ দুঃখরাতে

              মৃত্যুঘাতে

     মানুষ চূর্ণিল যবে নিজ মর্তসীমা

তখন দিবে না দেখা দেবতার অমর মহিমা?