প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
ফকির। কেন, কী হয়েছে।
পুষ্প। গুরু হাঁসের ডিমের বড়া খেয়েছিলেন, তার খোলাটা পড়ে গেছে তোমার চাদর থেকে বারান্দার কোণে।
ফকির। (লাফ দিয়ে উঠে) এঃ ছি ছি, করেছি কী!
পুষ্প। হতভাগা হাঁসটাকে পর্যন্ত বঞ্চিত করলে তুমি! সে তোমার পিছনে পিছনে প্যাঁক প্যাঁক করতে
করতে যেত বৈকুণ্ঠধামে— সেখানে পাড়ত স্বর্গীয় ডিম।
ফকির। (বেরিয়ে এসে খোলাটা নিয়ে বারবার মাথায় ঠেকালে) ক্ষমা কোরো গুরু, ক্ষমা কোরো— এ অণ্ড জগদ্ব্রহ্মাণ্ডের বিগ্রহ; এর মধ্যে আছে চন্দ্র সূর্য, আছে লোকপাল দিকপালরা সবাই। গঙ্গাজল দিয়ে ধুয়ে আনিগে।
পুষ্প। (চাদর চেপে ধ’রে) এনো, এখন তোমার বাবার কথাটা শুনে নাও।
বিশ্বেশ্বর। বাপু, ভক্তিটা খাটো করে আমার উক্তিটা মানো।
ফকির। কী আদেশ করেন।
বিশ্বেশ্বর। আর-একবার পাস করবার চেষ্টা করে দেখো।
ফকির। পারব না, বাবা।
বিশ্বেশ্বর। কী পারবি নে। পাস করতে না পাস করবার চেষ্টা করতে?
ফকির। চেষ্টা আমার দ্বারা হবে না।
বিশ্বেশ্বর। কেন হবে না।
ফকির। গুরুজি বলেন, পাশ শব্দের অর্থ বন্ধন। প্রথমে পাস, তার পরেই চাকরি।
বিশ্বেশ্বর। লক্ষ্মীছাড়া! কী করে চলবে তোমার! আমার পেন্সেনের উপর? আমি কি তোমাকে খাওয়াবার জন্যে অমর হয়ে থাকব। একটা কথা জিজ্ঞাসা করি— বউ মার কাছে টাকা চাইতে তোর লজ্জা করে না? পুরুষমানুষ হয়ে স্ত্রীর কাছে কাঙালপনা!
ফকির। আমি নিজের জন্যে এক পয়সা নিই নে।
বিশ্বেশ্বর। তবে নিস্ কার জন্যে।
ফকির। ওঁরই সদ্গতির জন্যে।
বিশ্বেশ্বর। বটে? তার মানে?
ফকির। আমি তো সবই নিবেদন করি গুরুজির ভোগে। তার ফলের অংশ উনিও পাবেন।
বিশ্বেশ্বর। অংশ পাবেন বটে! উনিই ফল পাবেন আঁঠিসুদ্ধ। ছেলেপুলেরা মরবে শুকিয়ে।
ফকির। আমি কিছুই জানি নে। (দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে) যা করেন গুরু।
বিশ্বেশ্বর। বেরো, বেরো আমার সামনে থেকে লক্ষ্মীছাড়া বাঁদর। তোর মুখ দেখতে চাই নে।
ফকির। কা তব কান্তা—
হৈমবতী। কী বকছ।