প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
বিশ্বেশ্বর। (হৈমর প্রতি) বেয়াই ব্যাঙ্কে তোমার নামে কিছু টাকা রেখে গেছেন। ফকির সেটা জানে, তাই তো ওর কিছু হল না।
পুষ্প। আর কী হলে আর কী হত, সে ভাবতে গেলে মাথা ধরে যায়।
বিশ্বেশ্বর। ম্যাকিননের হেড্বাবু আমার বন্ধুর শ্যালীপতি, সে বলেছিল, ফকির যা-হয় একটা কিছু পাস করলেই তাকে অ্যাসিস্টেণ্ট স্টোর্কীপার করে দেবে। বাঁদরটা কেবল জেদ করেই বারে বারে ফেল করতে লাগল।
পুষ্প। ফেল করবার বিশ্রী জেদ আরো অনেক ছেলের দেখেছি। মিত্তিরদের বাড়ির মোতিলাল আমার সঙ্গে একসঙ্গেই পড়া আরম্ভ করেছিল। ম্যাট্রিকের এ পারের খোঁটা এমনি বিষম জেদ করে আঁকড়িয়ে রইল, ওর পিসেমশায় ওর কানে ধরে ঝিঁকে মারতে মারতে কান প্রায় ছিঁড়ে দিলেন কিন্তু পার করতে পারলেন না। চল্ ভাই হৈমি, পড়া করবি আয়— স্বামীর হয়ে পাস করার কাজটা তুই সেরে রাখবি চল্।
বিশ্বেশ্বর। যাও পড়তে, কিন্তু শোনো মা— ফকির টাকা চাইলেই তুমি ওকে দাও কেন।
হৈম। কী করব বাবা, টাকা টাকা করে উনি বড়ো অশান্তি বাধান।
বিশ্বেশ্বর। ঐ দেখো-না, একটা রোঁওয়া-ওঠা বাঘের চামড়ার উপর বসে বিড়বিড় করে বকছে। এই ফকির, শুনে যা, বাঁদর। শুনে যা বলছি।
পুষ্প। মেসোমশায়, তোমার বুঝি সাহস হয় না ওকে ওর গণ্ডিটা থেকে টেনে আনতে!
বিশ্বেশ্বর। সত্যি কথা বলি, মা, ভয়-ভয় করে। ওর সব মন্তর-তন্তর ঠিক যে মানি তাও নয়, আবার না মানবার মতো বুকের পাটাও নেই। দেখো-না, ওখানটায় কিরকম খুদে পাগলা-গারদ সাজিয়েছে। গুরু কবে পাঁঠা খেয়েছিল, তার মুড়োর খুলিটা রেখেছে পশমের আসনে।
পুষ্প। ঐ জায়গাটাকে ও নাম দিয়েছে মোক্ষধাম। গুরুর সিগারেট-খাওয়া দেশলাই-কাঠিগুলো কাটা কাঁচকলার টুকরোর উপর পুঁতে পুঁতে গণ্ডি বানিয়েছে। ও বলে, কাঠিগুলোর আলো কিছুতেই নেবে না, যার দিব্যদৃষ্টি আছে সে চোখ বুজলেই দেখতে পায়। গুরুর একটা চা-সেটের ভাঙা পিরিচ এনেছে, সেটার প্রতিষ্ঠা হয়েছে গুরুর বর্মা চুরুটের প্যাক্বাক্সে। গুরু ভালোবাসেন সাড়ে আঠারো ভাজা, কিনে এনে নৈবেদ্য দেয় ঐ পিরিচ ভরে। বলে, ঐ পিরিচে যে পেয়ালা ছিল এক কালে, তার অদৃশ্যরূপ গুরুর অদৃশ্য প্রসাদ ঢালতে থাকে। মোক্ষধাম ভরে যায় দার্জিলিং চায়ের গন্ধে।
বিশ্বেশ্বর। আচ্ছা মা, ঐ বড়ো বড়ো বোতলগুলো কী করতে সাজিয়ে রেখেছে! ওর মধ্যে গুরুর ফীভার-মিক্শ্চারের অদৃশ্যরূপ ভরে রেখেছে না কি!
পুষ্প। বল্-না হৈমি, ওগুলো কিসের জন্যে।
হৈম। দক্ষিণা পেলেই গুরু তালপাতার উপর গীতার শ্লোক লিখে সেগুলো জল দিয়ে ধুয়ে দেন। গীতা-ধোওয়া জলে ঐ বোতলগুলো ভরা। তিন সন্ধে স্নান করে তিন চুমুক করে খান। ওঁর বিশ্বাস, ওঁর রক্তে গীতার বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আমার সংসার-খরচের দশ টাকার পাঁচখানা নোট ঐ বন্যায় গেছে ভেসে। যাই, আমার কাজ আছে।
বিশ্বেশ্বর। ওরে ও ফক্রে!
পুষ্প। আচ্ছা, আমি ওকে নিয়ে আসছি। (কাছের দিকে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে) ও ফকিরদা, করেছ কী!