মানসী
          দেখিতেছি কোটি গ্রহতারা—

       সুগভীর তামসীর ছিদ্রপথে যেন
          জ্যোতির্ময় তোমার আভাস,
       ওহে মহা-অন্ধকার, ওহে মহাজ্যোতি,
          অপ্রকাশ, চির-স্বপ্রকাশ।

 

       যখন জীবন-ভার ছিল লঘু অতি
          যখন ছিল না কোনো পাপ
       তখন তোমার পানে দেখি নাই চেয়ে,
          জানি নাই তোমার প্রতাপ—
       তোমার অগাধ শান্তি, রহস্য অপার,
          সৌন্দর্য অসীম অতুলন—
       স্তব্ধভাবে মুগ্ধনেত্রে নিবিড় বিস্ময়ে
          দেখি নাই তোমার ভুবন।

 

       কোমল সায়াহ্নলেখা বিষণ্ন উদার
          প্রান্তরের প্রান্ত-আম্রবনে,
       বৈশাখের নীলধারা বিমলবাহিনী
          ক্ষীণগঙ্গা সৈকতশয়নে,
       শিরোপরি সপ্ত ঋষি যুগ-যুগান্তের
          ইতিহাসে নিবিষ্ট-নয়ান,
       নিদ্রাহীন পূর্ণচন্দ্র নিস্তব্ধ নিশীথে
          নিদ্রার সমুদ্রে ভাসমান—

 

       নিত্যনিশ্বসিত বায়ু, উন্মেষিত উষা,
          কনকে শ্যামলে সম্মিলন,
       দূর দূরান্তরশায়ী মধ্যাহ্ন উদাস,
          বনচ্ছায়া নিবিড় গহন,
       যতদূর নেত্র যায় শস্যশীর্ষরাশি
          ধরার অঞ্চলতল ভরি—
       জগতের মর্ম হতে মোর মর্মস্থলে
          আনিতেছে জীবনলহরী।