মানসী
 জল বাষ্প বজ্র বায়ু               লভিয়াছে অন্ধ আয়ু,
         নূতন জীবনস্নায়ু টানিছে হতাশে,
  দিগ্বিদিক নাহি জানে,            বাধাবিঘ্ন নাহি মানে
         ছুটেছে প্রলয়-পানে আপনারি ত্রাসে;
  হেরো, মাঝখানে তারি            আট শত নরনারী
                      বাহু বাঁধি বুকে,
         প্রাণে আঁকড়িয়া প্রাণ, চাহিয়া সম্মুখে।

 

 তরণী ধরিয়া ঝাঁকে—         রাক্ষসী ঝটিকা হাঁকে,
                      “দাও, দাও, দাও! ”
 সিন্ধু ফেনোচ্ছল ছলে           কোটি ঊর্ধ্বকরে বলে,
                      “দাও, দাও, দাও! ”
 বিলম্ব দেখিয়া রোষে           ফেনায়ে ফেনায়ে ফোঁসে
         নীল মৃত্যু মহাক্রোশে শ্বেত হয়ে উঠে।
 ক্ষুদ্র তরী গুরুভার           সহিতে পারে না আর,
         লৌহবক্ষ ওই তার যায় বুঝি টুটে।
 অধ ঊর্ধ্ব এক হয়ে                  ক্ষুদ্র এ খেলনা লয়ে
                     খেলিবারে চায়।
             দাঁড়াইয়া কর্ণধার তরীর মাথায়।

 

 নরনারী কম্পমাপ                ডাকিতেছে, ভগবান!
                      হায় ভগবান!
 দয়া করো, দয়া করো!—              উঠিছে কাতর স্বর—
                      রাখো রাখো প্রাণ!
 কোথা সেই পুরাতন                  রবি শশী তারাগণ
             কোথা আপনার ধন ধরণীর কোল!
  আজন্মের স্নেহসার             কোথা সেই ঘরদ্বার,
            পিশাচী এ বিমাতার হিংস্র উতরোল!
 যে দিকে ফিরিয়া চাই              পরিচিত কিছু নাই,
                     নাই আপনার—
             সহস্র করাল মুখ সহস্র-আকার।

 

 ফেটেছে তরণীতল,              সবেগে উঠিছে জল,