চিত্রা

শ্বেতশিলাপটে, আবক্ষ ডুবায়ে জলে

বসিয়া সুন্দরী, কম্পমান ছায়াখানি

প্রসারিয়া স্বচ্ছ নীরে — বক্ষে লয়ে টানি

সযত্নপালিত শুভ্র রাজহংসীটিরে

করিছে সোহাগ — নগ্ন বাহুপাশে ঘিরে

সুকোমল ডানা দুটি, লম্বা গ্রীবা তার

রাখি স্কন্ধ- ' পরে, কহিতেছে বারম্বার

স্নেহের প্রলাপবাণী — কোমল কপোল

বুলাইছে হংসপৃষ্ঠে পরশবিভোল।

 

 

চৌদিকে উঠিতেছিল মধুর রাগিণী

জলে স্থলে নভস্তলে ; সুন্দর কাহিনী

কে যেন রচিতেছিল ছায়ারৌদ্রকরে

অরণ্যের সুপ্তি আর পাতার মর্মরে,

বসন্তদিনের কত স্পন্দনে কম্পনে

নিশ্বাসে উচ্ছ্বাসে ভাষে আভাসে গুঞ্জনে

চমকে ঝলকে। যেন আকাশবীণার

রবিরশ্মিতন্ত্রীগুলি সুরবালিকার

চম্পক-অঙ্গুলি-ঘাতে সংগীতঝংকারে

কাঁদিয়া উঠিতেছিল — মৌন স্তব্ধতারে

বেদনায় পীড়িয়া মূর্ছিয়া। তরুতলে

স্খলিয়া পড়িতেছিল নিঃশব্দে বিরলে

বিবশ বকুলগুলি ; কোকিল কেবলি

অশ্রান্ত গাহিতেছিল — বিফল কাকলি

কাঁদিয়া ফিরিতেছিল বনান্তর ঘুরে

উদাসিনী প্রতিধ্বনি ছায়ায় অদূরে

সরোবরপ্রান্তদেশে ক্ষুদ্র নির্ঝরিণী

কলনৃত্যে বাজাইয়া মাণিক্যকিংকিণী

কল্লোলে মিশিতেছিল ; তৃণাঞ্চিত তীরে

জলকলকলস্বরে মধ্যাহ্নসমীরে