কালো মেয়ে

          মরচে-পড়া গরাদে ওই, ভাঙা জানলাখানি ;

    পাশের বাড়ির কালো মেয়ে নন্দরানী

          ওই খানেতে বসে থাকে একা,

শুকনো নদীর ঘাটে যেন বিনা কাজে নৌকোখানি ঠেকা।

 

 

                        বছর বছর করে ক্রমে

                        বয়স উঠছে জমে।

           বর জোটে না, চিন্তিত তার বাপ ;

          সমস্ত এই পরিবারের নিত্য মনস্তাপ

          দীর্ঘশ্বাসের ঘূর্ণি হাওয়ায় আছে যেন ঘিরে

               দিবসরাত্রি কালো মেয়েটিরে।

           সামনে-বাড়ির নিচের তলায় আমি থাকি “ মেস ” -এ।

                   বহুকষ্টে শেষে

           কলেজেতে পার হয়েছি একটা পরীক্ষায়।

               আর কি চলা যায়

     এমন করে এগ্‌জামিনের লগি ঠেলে ঠেলে।

          দুই বেলাতেই পড়িয়ে ছেলে

     একটা বেলা খেয়েছি আধ - পেটা

                   ভিক্ষা করা সেটা

                   সইত না একেবারে,

          তবু গেছি প্রিন্সিপালের দ্বারে

বিনি মাইনেয়, নেহাত পক্ষে, আধা মাইনেয়, ভর্তি হবার জন্যে।

    এক সময়ে মনে ছিল আধেক রাজ্য এবং রাজার কন্যে

                  পাবার আমার ছিল দাবি,

    মনে ছিল ধনমানের রুদ্ধ ঘরের সোনার চাবি

        জন্মকালে বিধি যেন দিয়েছিলেন রেখে

           আমার গোপন শক্তিমাঝে ঢেকে।

        আজকে দেখি, নব্যবঙ্গে

          শক্তিটা মোর ঢাকাই রইল, চাবিটা তার সঙ্গে।