পলাতকা

                   আমার মুখে চেয়ে

     সেলাম করে বাহির হয়ে রইল ধরে বারান্দাটার থাম।

                   বিনু বললে, “ রুক্‌মিনণী ওর নাম।

          ওই যে হোথায় কুয়োর ধারে সার-বাঁধা ঘরগুলি

          ওইখানে ওর বাসা আছে, স্বামী রেলের কুলি ;

                   তেরোশো কোন্‌ সনে

           দেশে ওদের আকাল হল — স্বামী-স্ত্রী দুইজনে

               পালিয়ে এল জমিদারের অত্যাচারে।

সাত বিঘে ওর জমি ছিল কোন্‌--এক গাঁয়ে কী-এক নদীর ধারে — ”

                   বাধা দিয়ে আমি বললেম হেসে,

“ রুক্‌মিণীর এই জীবনচরিত শেষ না হতেই গাড়ি পড়বে এসে।

          আমার মতে, একটু যদি সংক্ষেপেতে সারো

               অধিক ক্ষতি হবে না তায় কারো। ”

     বাঁকিয়ে ভুরু, পাকিয়ে চক্ষু, বিনু বললে খেপে —

                ‘ কখ্‌খোনো না, বলব না সংক্ষেপে।

আপিস যাবার তাড়া তো নেই, ভাবনা কিসের তবে।

          আগাগোড়া সব শুনতেই হবে। ”

     নভেল-পড়া নেশাটুকু কোথায় গেল মিশে।

          রেলের কুলির লম্বা কাহিনী সে

     বিস্তারিত শুনে গেলেম আমি।

আসল কথা শেষে ছিল, সেইটে   কিছু দামি।

          কুলির মেয়ের বিয়ে হবে, তাই

                   পৈঁচে তাবিজ বাজুবন্ধ গড়িয়ে দেওয়া চাই ;

অনেক টেনেটুনে তবু পঁচিশ টাকা খরচ হবে তারি ;

                   সে ভাবনাটা ভারি

          রুক্‌মিণীরে করেছে বিব্রত।

          তাই এবারের মতো

               আমার ‘ পরে ভার

          কুলি নারীর ভাবনা ঘোচাবার।

আজকে গাড়ি চড়ার আগে একেবারে থোকে

          পঁচিশ টাকা দিতেই হবে ওকে।