চিত্রা

বাজাতে বাজাতে তাই মুগ্ধ হয়ে আপনার সুরে

দীর্ঘদিন দীর্ঘরাত্রি চলে গেনু একান্ত সুদূরে

ছাড়ায়ে সংসারসীমা। সে বাঁশিতে শিখেছি যে সুর

তাহারি উল্লাসে যদি গীতশূন্য অবসাদপুর

ধ্বনিয়া তুলিতে পারি, মৃত্যুঞ্জয়ী আশার সংগীতে

কর্মহীন জীবনের এক প্রান্ত পারি তরঙ্গিতে

শুধু মুহূর্তের তরে, দুঃখ যদি পায় তার ভাষা,

সুপ্তি হতে জেগে ওঠে অন্তরের গভীর পিপাসা

স্বর্গের অমৃত লাগি — তব ধন্য হবে মোর গান,

শত শত অসন্তোষ মহাগীতে লভিবে নির্বাণ।

 

 

কী গাহিবে, কী শুনাবে! বলো, মিথ্যা আপনার সুখ,

মিথ্যা আপনার দুঃখ। স্বার্থমগ্ন যেজন বিমুখ

বৃহৎ জগৎ হতে সে কখনো শেখে নি বাঁচিতে।

মহাবিশ্বজীবনের তরঙ্গেতে নাচিতে নাচিতে

নির্ভয়ে ছুটিতে হবে, সত্যেরে করিয়া ধ্রুবতারা।

মৃত্যুরে করি না শঙ্কা। দুর্দিনের অশ্রুজলধারা

মস্তকে পড়িবে ঝরি — তারি মাঝে যাব অভিসারে

তার কাছে, জীবনসর্বস্বধন অর্পিয়াছি যারে

জন্ম জন্ম ধরি। কে সে? জানি না কে। চিনি নাই তারে —

শুধু এইটুকু জানি — তারি লাগি রাত্রি-অন্ধকারে

চলেছে মানবযাত্রী যুগ হতে যুগান্তর-পানে

ঝড়ঝঞ্ঝা-বজ্রপাতে, জ্বালায়ে ধরিয়া সাবধানে

অন্তরপ্রদীপখানি। শুধু জানি যে শুনেছে কানে

তাহার আহ্বানগীত, ছুটেছে সে নির্ভীক পরানে

সংকট আবর্তমাঝে, দিয়েছে সে বিশ্ব বিসর্জন,

নির্যাতন লয়েছে সে বক্ষ পাতি মৃত্যুর গর্জন

শুনেছে সে সংগীতের মতো। দহিয়াছে অগ্নি তারে,

বিদ্ধ করিয়াছে শূল, ছিন্ন তারে করেছে কুঠারে,

সর্ব প্রিয়বস্তু তার অকাতরে করিয়া ইন্ধন

চিরজন্ম তারি লাগি জ্বেলেছে সে হোম-হুতাশন —